ধীমান রায়, কাটোয়া: কারও ঘরে রয়েছে ছোট্ট সন্তান। আবার কারও ঘরে রয়েছেন স্ত্রী। তো কেউ বয়স্ক বাবা-মায়ের একমাত্র অবলম্বন। তাই সামান্য আয়ে সংসারের যাবতীয় খরচখরচা সামলানো কার্যত অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। দিব্যি বেশি উপার্জনে খেয়ে পরে বাঁচছিল পরিবার। কিন্তু আচমকা করোনার প্রাদুর্ভাবে লকডাউনের সিদ্ধান্তে বদলে গেল সব কিছু। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় না খেয়ে ভিনরাজ্যে দিন কাটাতে হয় পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম এবং মুর্শিদাবাদের কাগ্রামের অন্তত ১৫ জন শ্রমিককে। স্পেশ্যাল ট্রেনের টিকিট না মেলায় বাধ্য হয়ে ১৫ দিন ধরে সাইকেল চালিয়েই বাড়ি ফিরলেন তাঁরা।
একদিকে লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন আটকে থাকার নিদারুণ যন্ত্রণা। তার উপর পরিবারের সদস্যরা চিন্তায় আকুল হয়ে বারবার ফোন করে কান্নাকাটি করছেন। তাই কোনওভাবেই মন মানছিল না। অবশেষে চেন্নাই থেকে সাইকেলে চড়ে বাড়ি ফিরলেন ১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিক। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ও মুর্শিদাবাদের কাগ্রামের ১৫ জন সোমবার কাটোয়া হয়ে যে যার ঘরের দিকে রওনা দিলেন। খিদের জ্বালা, শরীরের ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে টানা ১৫ দিন ধরে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। তাঁদের সকলের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। সুস্থ অবস্থায় প্রিয়জনকে ফিরে পেয়ে আপ্লুত পরিবারের লোকজনরাও।
শ্রমিক মোহন শেখ, তুফান শেখরা বলেন, “লঙ্গরখানায় এক বেলা ডাল, রুটিই ভরসা ছিল। ফলে কিছু টাকা বেঁচে যায়। বাড়ি ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে কাছে থাকা শেষ সম্বল দিয়ে ১৫টি নতুন সাইকেল কিনি। প্রত্যেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি করে নতুন সাইকেল কিনি। তারপরেই ব্যাগপত্র সাইকেলে বেঁধে নিয়ে ১৫ দিন আগে রওনা দিয়েছিলাম। ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশের উপর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরি। তারপর জাতীয় সড়ক ধরে সোজা বর্ধমান। সেখান থেকে কাটোয়ায় আসি সোমবার। আর পারছিলাম না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.