অরূপ বসাক, মালবাজার: এক মাসে আগে অন্ধ্রপ্রদেশে কাজের সন্ধানে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেছিলেন পরিবারের লোকেরা। বুধবার সকালে নিজে থেকে বাড়িতে ফিরলেন নিখোঁজ যুবক। তাঁর সারা শরীরে মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট। ওই যুবকের দাবি, ট্রেনে মাদক মেশানো সিগারেট খাইয়ে সর্বস্ব লুট করে নেয় দুষ্কৃতীরা। অন্ধ্রপ্রদেশে পৌঁছনোর পর ৫ দিন না খেয়ে ছিলেন। শেষে এক দালালের খপ্পরে পড়েন ওই যুবক। মারধর করা তো হয়েইছে, ইলেকট্রিক শক পর্যন্ত দিয়েছে ওই দালাল। ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ির মালবাজার মহকুমার ওদলাবাড়িতে।
[পাহাড়ি নদীতে সিলিন্ডার বোঝাই গাড়ি, দুর্ঘটনায় মৃত ২]
স্ত্রী, দুই সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সংসার। মালবাজারের ওদলাবাড়ি শহরে ভ্যান চালিয়ে দিন গুজরান করতেন সুভাষ রায়। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, গত ৬ এপ্রিল কাজের সন্ধান অন্ধ্রপ্রদেশ গিয়েছিলেন সুভাষ। রওনার হওয়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর কোনও যোগোযোগ ছিল না পরিবারের। স্বামীকে বহুবার ফোন করেছিলেন স্ত্রী সুমি। কিন্তু, ফোন সুইচড অফ ছিল। ওদলাবাড়িতে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছিলেন সুভাষ রায়ের পরিবারের লোকেরা। মালবাজার থানার নিখোঁজ ডায়েরিও করেছিলেন স্ত্রী সুমি। শেষপর্যন্ত, বুধবার ভোরে বাড়ি ফিরলেন সুভাষ। পরিবারের লোকেদের দাবি, বাড়ি ফেরার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই যুবক। তাঁর শরীরের আঘাতে চিহ্ন। তবে ঘরের ছেলে যে ঘরে ফিরেছে, তাতে খুশি পরিবারের লোকেরা।
[হাসপাতালে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু চিকিৎসকের, শোকের ছায়া বাঁকুড়া মেডিক্যালে]
কিন্তু, এক মাস কোথায় ছিলেন বছর ছাব্বিশের ওই যুবক? কীভাবেই বা তিনি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন? সুভাষ রায় জানিয়েছেন, ট্রেনে মাদক মেশানো সিগারেট খাইয়ে সর্বস্ব লুট করে নেয় দুষ্কৃতীরা। যখন অন্ধ্রপ্রদেশে পৌঁছন, তখন তাঁর কাছে খাওয়ার পয়সাও ছিল না। প্রায় পাঁচদিন খালি পেটে কাজের সন্ধান করেন সুভাষ। শেষে এক দালালের খপ্পরে পড়েন। প্রায় ২০ দিন বিনা পয়সায় ওই যুবককে কাজ করতে বাধ্য করেন ওই দালাল। মারধর, এমনকী ইলেকট্রিক শক পর্যন্ত দেওয়া হত। পেশায় ভ্যানচালক ওই যুবকের দাবি, অন্ধ্রপ্রদেশের এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজ করে কোনওমতে কিছু টাকা জোগাড় করেন তিনি। সেই টাকায় টিকিট কেটে জলপাইগুড়ি ফেরেন সুভাষ রায়। স্টেশন থেকে ৬৫ কিমি পথ পায়ে হেঁটে বুধবার ভোরে ওদলাবাড়িতে নিজের বাড়িতে পৌঁছন তিনি। এদিকে এই ঘটনার পর ছেলে কাছছাড়া করতে চাইছেন না সুভাষের মা মেনকা রায়। তিনি বলেন, ‘নুন ভাত খেয়ে থাকব। তবু ছেলেকে আর বাইরে পাঠাব না।’ অন্ধ্রপ্রদেশ যাওয়ার আগে ওদলাবাড়িতে ভ্যান চালাতেন সুভাষ। একটি টোটো কেনার জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
[শিলিগুড়িতে আতঙ্কের অবসান, কুকুরের টোপে খাঁচাবন্দি চিতাবাঘ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.