বিপ্লব চন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: একটি চিঁড়ের উপর ফুটে উঠেছে ভারতের মানচিত্র। এমনই মানচিত্র এঁকেছেন কুড়ি বছরের শিল্পী শাওন পাল। ইতিমধ্যেই তাঁর সেই শিল্পকর্ম ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছে।
শাওনের কথায়, “ছোট থেকেই কিছু একটা করব, এমন ভাবনাচিন্তা মাথায় ছিল। ছবি আঁকার শখ আমার। বর্তমানে আঁকা শেখাই। তবে শেষ পর্যন্ত আমার নাম যে ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডে উঠবে, তা আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি।” আগামিদিনে শাওনের লক্ষ্য, এশিয়া রেকর্ড করার। তারপর তিনি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তুলতে চান বলে জানিয়েছেন।
নদিয়ার শান্তিপুর পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের অদ্বৈত লেনে বাড়ি শাওনের। বাবা মানিক পাল একজন স্বর্ণশিল্পী। মা শিপ্রা পাল গৃহবধূ। শাওনরা এক ভাই, এক বোন। ছোট বোন মন্দিরা মাধ্যমিকের পড়াশোনা করছে। শাওন বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ছাত্র। বারাকপুরের একটি সংস্থায় বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়েন শাওন। ছোট থেকেই ছবি আঁকার শখ। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই কৃষ্ণনগর এবং শান্তিপুরের শিল্পীদের কাছে ছবি আঁকা শিখেছেন। ৮ জানুয়ারি রাতে শাওন ভারতের ক্ষুদ্রতম মানচিত্র আঁকার প্রচেষ্টা শুরু করেন। অবশ্য তার আগে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের বিভিন্ন কাজ তাঁর মাথায় ঘোরাফেরা করছিল। শান্তিপুরের ফুলিয়ার ছেলে অনুপম সরকার ইতিমধ্যেই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম তুলেছেন। তাঁকে দেখে কিছুটা অনুপ্রেরণা জাগে শাওনের। এছাড়া ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের অধিকারী অঙ্কুর সামন্ত এবং সৌরভ মোদকের কৃতিত্বও তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
শাওন বলেন, “৮ জানুয়ারি ভারতের ক্ষুদ্রতম মানচিত্র আঁকার চেষ্টা শুরু করি। প্রথমে ভেবেছিলাম, ছোলার ডাল, চাল অথবা চিনির উপর মানচিত্র আঁকব। পরে চিঁড়ের উপরে আঁকা শুরু করি। সূচের ডগায় কালো কালি ব্যবহার করে এঁকে ফেলি ভারতের সবচেয়ে ক্ষুদ্র মানচিত্র। ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ আমাকে ছবি আঁকার ভিডিও এবং দু’জন সাক্ষীর শংসাপত্র পাঠাতে বলেন। এরপর আমাদের দু’জন শিক্ষকের সামনে ভিডিও তৈরি করে পাঠিয়ে দিই। তিনদিন পরই জানতে পারি, আমার শিল্পকর্ম ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে।” ৬ ফেব্রুয়ারি শাওন ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের দেওয়া শংসাপত্র, মেডেল, ব্যাজ, পেন ও পরিচয়পত্র পেয়ে যান। শাওনের আঁকা ভারতের মানচিত্রের দৈর্ঘ্য মাত্র ১.৫ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ০.৫ সেন্টিমিটার।
শাওনের বক্তব্য, “চিঁড়ের উপর ভারতের মানচিত্র এর আগে কেউ তৈরি করেননি বলেই জেনেছি।” চিঁড়ের উপর অতিক্ষুদ্র ওই মানচিত্র সাধারণ চোখে দেখা কিছুটা কষ্টসাধ্য। তাছাড়া তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই সেটা ল্যামিনেট করে রেখেছেন শাওন। বলছেন, “এর আগে পোস্তদানার উপর ভারতের পতাকা এঁকে ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডসে স্থান পেয়েছেন অঙ্কুর সামন্ত। তাকে আর আরও কয়েকজনকে দেখে আমি এই ধরনের আঁকার অনুপ্রেরণা পাই। ভাল কিছু করার তো শেষ নেই। এখনও কিছুই করে উঠতে পারিনি। শুধু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মাত্র। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে বেশি ভাল লাগবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.