বাবুল হক, মালদহ: ফের ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে খুন হতে হল মালদহের এক শ্রমিককে। তবে এবার রাজস্থান নয়, ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লিতে। নিহত শ্রমিকের নাম রামু মহালদার (৩২)। পেশায় নির্মাণ শ্রমিক রামুর বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকা গ্রামে। শনিবার দিল্লি থেকে তাঁর কফিনবন্দি নিথর দেহ মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে এলাকায় পৌঁছলে শোকের ছায়া নেমে আসে। খবর পেয়ে রবিবার মৃত শ্রমিকের বাড়িতে গিয়ে পরিজনদের সমবেদনা জানিয়ে আসেন স্থানীয় বিধায়ক মোস্তাক আলম ও চাঁচোল মহকুমার এসডিপিও সজলকান্তি বিশ্বাস-সহ ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। এদিন পরিবারের সদস্যদের হাতে ব্লক প্রশাসনের তরফে সমব্যথী প্রকল্পের দু’হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।
খুন হয়েছেন রামু। এমনই দাবি তাঁর পরিজনদের। কথা প্রসঙ্গে পরিজনরা জানিয়েছে, মাত্র দেড়মাস আগে দিল্লি গিয়েছিলেন রামু। সেখানে এক ঠিকাদারের অধীনে তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদারের কাছে পাওনা টাকা চাইতে যান। পরের দিন সকালে একটি ডাস্টবিনে রামুকে পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করান এক অটোচালক। ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। রামুকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি পরিজনদের।
মৃতের ভাইয়ের এহেন অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ সুমন প্রামাণিক নামের ওই ঠিকাদারকে গ্রেপ্তার করেছে।
জানা গিয়েছে, দিল্লিতে করোলবাগ এলাকায় থাকতেন রামু। সেখানকার বাসিন্দা ধৃত সুমন প্রামাণিকের অধীনে একটি নির্মাণ সংস্থায় শ্রমিকের কাজ করতেন। তাঁর আর এক ভাই মনোজ মহালদার মুম্বইতে শ্রমিকের কাজ করেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পাওনা টাকা চাইতে সুমনবাবুর কাছে যান রামু। কিন্তু তিনি আর ভাড়াবাড়িতে ফিরে আসেননি। সেদিন খোঁজ করেও রামুর হদিশ পাননি তার সঙ্গীরা। পরদিন তাঁকে একটি ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করে রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন এক অটোচালক। কিন্তু কোমায় থাকা রামুকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তাঁর পকেটে থাকা ভোটার কার্ড দেখে ওই অটোচালক থানায় খবর দেন। তারপর দিল্লি পুলিশের তরফে পরিজনদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে মুম্বই থেকে দিল্লিতে পৌঁছন রামুর ভাই মনোজ। তিনিই কনৌট প্লেস থানায় সুমন প্রামাণিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে সুমনকে গ্রেপ্তার করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ময়নাতদন্তের পর দেহ মালদহের উদ্দেশে পাঠানো হয়। স্ত্রী কল্পনাদেবী ছাড়াও তাঁর বাড়িতে রয়েছে চার বছরের মেয়ে নন্দিনী ও দু’বছরের ছেলে অঙ্কুশ। শোকে কাতর হয়ে পড়েছে গোটা পরিবার। দুই সন্তানকে নিয়ে এখন কীভাবে সংসার চলবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না কল্পনাদেবী।
সম্প্রতি রাজস্থানের রাজসামন্দ জেলায় খুন হন মালদহের কালিয়াচকের শ্রমিক আফরাজুল খান। তারপর চাঁচোলের স্বরূপগঞ্জের শ্রমিক সাকের আলির রহস্যজনক ভাবে খুন হন রাজস্থানের জয়পুরে। সাকেরকেও খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে পরিজনরা। তারপর ফের দিল্লিতে রহস্যজনকভাবে মারা গেলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের শ্রমিক রামু মহালদার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.