সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বয়স তো সংখ্যা মাত্র। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোর থাকলে কী না সম্ভব। ইচ্ছাশক্তিতে ভর করেই তো ১০২ বছর বয়সে বিশ্বমঞ্চে সোনা জিতে ইতিহাস গড়তে পেরেছেন মন কউর। মনের জোরের কাছে মাথা নত করতে হয় বয়সকেও। বয়স যে শুধুই সংখ্যা তা এবার প্রমাণ করলেন এক বাঙালি প্রৌঢ়া। ৫০ বছর বয়সে সাইকেলে গোটা ইউরোপ ঘুরে নজির গড়লেন পলতার বাসিন্দা লিপিকা বিশ্বাস।
সাইলেকে বিশ্বভ্রমণের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু তাই বলে ৫০ বছর বয়সে! সত্যিই অবিশ্বাস্য। কিন্তু এমন অসম্ভবকেই বাস্তবে পরিণত করেছেন লিপিকা বিশ্বাস। বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তিই জীবনের সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। ৫০ দিনে ২,৫৩৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শনিবারই বাড়ি ফিরেছেন তিনি। শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ। বরং আগামিকাল রবিবার নিজের জন্মদিনের আগে একটু বেশিই ফুরফুরে দেখাচ্ছে লিপিকাদেবীকে। এ তৃপ্তি তো বিশ্বজয়ের আনন্দ থেকে কম কিছু নয়। অনেকেই যা করার কথা ভাবেনই না, তা তিনি করে দেখিয়েছেন এই বয়সে। আর তাই তো চোখে-মুখে ক্লান্তির কোনও ছাপ নেই তাঁর। রয়েছে শুধু সাফল্যের সন্তুষ্টি।
গত ২২ জুলাই কলকাতা থেকে সফর শুরু করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ দর্শন। প্রথমে পৌঁছান জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফুর্টে। ২৫ জুলাই সেখান থেকে একে একে ছটি দেশে পাড়ি জমান। নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ড। আর এই গোটা সফরে একমাত্র সঙ্গী হিসেবে ছিল তাঁর সাধের সাইকেলটি। অভিযান চলাকালীনই নেদারল্যান্ডসের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে জানানো হয়, প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে একা সাইক্লিং করে ইউরোপ ঘুরে নজির গড়েছেন লিপিকা বিশ্বাস। ভাষা কিংবা আবহাওয়া কোনও কিছুই তাঁর লক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। একাকী নারী হিসেবে কোনও প্রতিকূলতাতে ভয়ও পাননি।
১২ সেপ্টেম্বর আইসল্যান্ডের রেকজাভিকে শেষ হয় স্বপ্নের সফর। লিপিকাদেবী বলছিলেন, তাঁর মনে হয়েছিল সাইকেলে গোটা আইসল্যান্ড ঘুরতে অন্তত এক মাস লাগবে। কিন্তু আইসল্যান্ডে পৌঁছনোর পর তাঁর হাতে ছিল মাত্র ৯ দিন। তাতেই যেটুকু সম্ভব ঘোরেন তিনি। সেখান থেকে বিমানে চেপে পৌঁছে যান ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। অবশেষে দীর্ঘ সফর শেষ করে আজ শনিবার বিমানে কলকাতায় পা রাখেন।
তবে এই প্রথমবার নয়, ঘুরতে যাওয়ার শখ তাঁর বরাবরের। আর সেই শখকে প্রতিবারই আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছেন তিনি সাইক্লিং করে। ২০১১ সালে সাইকেলে কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী ৩০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছিলেন। সে বছরই ইউথ হোস্টেলের উদ্যোগে মহিলা দলের অংশ নিয়ে সাইকেলে কুলু থেকে খারদুং লা গিয়েছিলেন। সাইকেল নিয়ে প্রায় ১৮,৩৮০ ফিট ঢালু রাস্তা উঠেছিলেন তিনি। পরের বছর সাইকেলে অসমের গুয়াহাটি থেকে যান অরুণাচলের তাওয়াং। এখানেই শেষ নয়, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে এভারেস্ট অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন পূর্ব রেলের কর্মী লিপিকা বিশ্বাস। তবে প্রাকৃতিক কারণে সে অভিযান ব্যর্থ হয়। ২০১৫ সালে সাইকেলে ঘুরেছিলেন গোটা বাংলাদেশ। নিজের নয়া নজিরে উচ্ছ্বসিত তিনি। সুযোগ পেলে ফের পাড়ি দেবেন কোনও অজানার উদ্দেশে। সঙ্গী হবে সেই সাইকেল।
ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.