অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: চার বছর ধরে দেওরের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক বউদির। কিন্তু পাঁচ বছরের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যেতে রাজি না হয়নি ‘প্রেমিক’ দেওর। আর সেই অভিমানেই আত্মঘাতি হলেন ‘প্রেমিকা’ গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার জামনা এলাকায়। যদিও গৃহবধূর স্বামী এই ঘটনায় নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ দায়ের করায় ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে অনুমান, খুন নয়, ঘটেছে আত্মহত্যার ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মৌসুমী মাইতি। গৃহবধূর বয়স ২৭ বছর। মৌসুমীর বাপের বাড়ি পার্শ্ববর্তী সবং থানার কাঁটাখালি গ্রামে। ৮ বছর আগে পিংলা গ্রামের শ্রীমন্ত মাইতির সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের একটি ৫ বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে। শ্রীমন্তর বাড়ি পিংলা থানার পিছনেই, কয়েকশো মিটারের মধ্যেই। শ্রীমন্ত পেশায় রাজমিস্ত্রি। বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। ভাই নীলাদ্রি মাইতি জরির কাজ করতে হাওড়া জেলার বাগনানে থাকত। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসত। এবার এসেছিল বড়দিন উপলক্ষে।
শ্রীমন্তর অভিযোগ, সোমবার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এক ব্যক্তির বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন তিনি। দুপুর দেড়টা নাগাদ ভাত খাওয়ার জন্য বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে ঘরের ভিতরে ঢোকেন। পিছনের একটি ঘরে গিয়ে দেখতে পান মৌসুমী গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছেন। স্বামীর চিৎকারে ছুটে আসে প্রতিবেশীরা। খবর যায় পিংলা থানায়। উদ্ধার করা হয় মৌসুমীকে। পুলিশ মৌসুমীর স্বামী ও দেওরকে থানায় ডেকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানেও ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি শ্রীমন্ত। ফলে ওই দিন পুলিশ কেবলমাত্র একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে।
মঙ্গলবার ওই গ্রামের কিছু গ্রামবাসী একটি সালিশি সভায় দুই ভাইকে নিয়ে বসে। গ্রামবাসীদের একাংশ দাবি করে, গৃহবধূ যেভাবে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছিলেন তা আত্মহত্যা হতেই পারে না। সালিশি সভায় উপস্থিত গ্রামবাসীদের দাবি, নীলাদ্রিকে চেপে ধরতেই সে স্বীকার করে যে বউদির সঙ্গে তার চারবছর ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। এরপরই পিংলা থানার পুলিশ মঙ্গলবার নীলাদ্রিকে গ্রেপ্তার করে এবং খুনের মামলা দায়ের করে। যদিও নীলাদ্রি এই খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুলিশের একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, এটি খুনের ঘটনা নয়। এটি আত্মহত্যাই। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত এবং ময়না তদন্তের প্রাথমিক সূত্রও আত্মহত্যার তত্ত্বেই সায় দিচ্ছে। এটা ঠিকই যে মৌসুমীর সঙ্গে নীলাদ্রির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। নীলাদ্রি বাইরে কাজ করে নিজের বাবা-মার পাশাপাশি বউদিকেও টাকা পাঠাত। দেওর-বউদি সম্পর্কের কথা গ্রামবাসীদের কেউ কেউ যেমন জানত তেমনি জানত মৌসুমীর বাপের বাড়ির লোকেরা। যে কারণে বাপের বাড়ি থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। মনে করা হচ্ছে, মৌসুমী চাইছিলেন সন্তানকে নিয়ে দেওরের সঙ্গে পালাতে। কিন্তু নীলাদ্রি লোকলজ্জার ভয়ে সেটা করতে রাজি হয়নি। আর সেই অভিমান থেকেই আত্মহত্যা করেছেন মৌসুমী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.