Advertisement
Advertisement

Breaking News

জওহরলাল নেহরু

পাঞ্চেত ড্যাম উদ্বোধনে নেহরুকে মালা পরানোর ‘অপরাধ’, সাঁওতাল সমাজে আজও ব্রাত্য বুধনি

জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনে যেন এই ক্ষত আরও দগদগে ওঠে সাঁওতাল মহিলার।

Bengal tribal woman remembers Nehru on Children's Day
Published by: Sayani Sen
  • Posted:November 14, 2019 2:54 pm
  • Updated:November 14, 2019 3:21 pm  

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: পাঞ্চেত ড্যামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেই মঞ্চেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর গলায় মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন তিনি। ‘অপরাধ’ ছিল এটুকুই। তার জেরে সাঁওতাল সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাঁকে। বাধ্য হয়ে গত ৬০ বছর ধরে একাই জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বুধনি মেঝাইন। সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে ওঠেন তিনি। জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনে যেন এই ক্ষতি আরও দগদগে ওঠে। আগের সেই দিনগুলি আজও কুরে কুরে খায় বুধনিকে।

তখন সবে মানভূম জেলা বিভক্ত হয়েছে। বাংলা ও বিহার (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) সীমানাও দু’ভাগে ভাগ করেছে পাঞ্চেত ড্যামকে। খরবনা গ্রামের বুধনি মেঝাইন ও তাঁর বাবা রাবণ মাঝি তখন ড্যাম তৈরির কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঞ্চেত ড্যামের কাজ শেষ হতেই ঠিক হয় তা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। প্রধানমন্ত্রীর অভ্যর্থনায় দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসি’র কর্তারা অনেক চিন্তাভাবনা করে বুধনির নাম চূড়ান্ত করে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, জওহরলাল নেহরু পাঞ্চেতে আসেন ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৫৯ সালে। সাঁওতাল কিশোরী বুধনি অভ্যর্থনা জানান তাঁকে। নেহরুকে পরিয়ে দেন চন্দনের টিকা এবং মালা। বুধনিকে সাঁওতালি ভাষায় বলানো হয়, “এই ড্যাম জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত।” অভ্যর্থনায় নেহরু ভীষণ খুশি। বুধনিকে দিয়েই করালেন পাঞ্চেত ড্যামের উদ্বোধনও। নেহরুর অনুরোধে বুধনি মেঝাইন জল ছাড়ার চাকা ঘুরিয়ে ড্যাম উদ্বোধন করেছিলেন। সম্ভবত তিনি দেশের প্রথম শ্রমিক যিনি কোনও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এত বড় একটি ড্যাম উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়েছেন।

Advertisement

এই ঘটনাটি বুধনির জীবনকে চিরদিনের জন্য বদলে দেয়। খুশি হয়ে বাড়ি ফেরেন বুধনি। কিন্তু বাড়ি ফিরেই বদলে গেল গোটা পরিস্থিতি। গ্রামে ফিরতেই মোড়লরা রায় দিলেন অনাবাসী উপজাতির সঙ্গে বিয়ের জেরে সাঁওতালি সমাজ থেকে বর্জন করা হল তাঁকে। নিরুপায় বুধনি ছলছল চোখ নিয়ে গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে যান। সমাজপতিদের নিদানে সর্বহারা হয়ে সেদিন রাস্তায় ঠাঁই হয়েছিল বুধনির। একজন সাঁওতাল জনজাতির মহিলা অমানবিক রক্ষণশীলতার শিকার হয়েছিলেন। ১৯৫৯ সাল থেকে আত্মসম্মানের জন্য লড়াই  শুরু বুধনির। সেই সময় ডিভিসির একজন কর্মী ছিলেন। ১৯৬২ সালে ডিভিসি কর্মী সংকোচন করলে চাকরি যায় বুধনির। নিরুপায় হয়ে পেটের দায়ে বুধনি কখনও পারবেলিয়া কখনও ঝাড়খণ্ডে গিয়ে সাত বছর ধরে রুটিরুজির জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তারপর সুধীর দত্ত নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় বুধনির। বন্ধুত্ব থেকে কাছে আসা। নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতেও শুরু করেন তাঁরা। তবে সমাজের ভয়ে প্রথমে বিয়ে করতে পারেননি দু’জনে। কিছুদিন পর সেই ভয়কে জয় করেন তাঁরা। একসঙ্গে জীবন কাটাতে শুরু করেন বুধনি এবং সুধীর।

[আরও পড়ুন: অনুব্রতর পদতলে প্রশাসনিক কর্তা! ‘মহাগুরু’ সম্বোধন করে ফেসবুক পোস্টে প্রবল বিতর্ক]

প্রায় ২০ বছর পর রাজীব গান্ধী বুধনির কথা জানতে পারেন। ওড়িশায় রাজীব গান্ধীর সঙ্গে দেখাও করতে গিয়েছিলেন বুধনি। ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর হস্তক্ষেপে ডিভিসি বুধনিকে চাকরিতে ফিরিয়ে নেয়। এখন বুধনী অবসরপ্রাপ্ত। তাঁর নাতনি এখন ডিভিসির কর্মী। নিজের মানসম্মান, সম্ভ্রম, আত্মসম্মান হারানোর অভিমান নিয়েই বেঁচে আছেন বুধনি।

Budhni

৭৫ বছর বয়সি ওই মহিলা নানা বঞ্চনা নিয়ে আজও বেঁচে রয়েছেন। বঞ্চনা থেকেই জন্ম নিয়েছে ক্ষোভ। আর সে কারণেই কিছুদিন আগে ফিরিয়ে দিয়েছেন বলিউড পরিচালকের বায়োপিক বানানোর প্রস্তাবও। টাকার অঙ্ক মোটা হলেও তিনি রাজি হননি। সাঁওতাল সমাজের অনেক বদল হয়েছে। কুসংস্কারকে পিছনে ফেলে ধীরে ধীরে আলোর পথে ফিরছেন সকলেই। কিন্তু যে সমাজে তিনি অপমানিত সেখানে আর ফিরতে চান না বুধনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement