সুদীপ রায়চৌধুরি: ১ থেকে এখন ৬৷ এবার নজর শীর্ষে৷
দেশের পর্যটন মানচিত্রে নবম থেকে ষষ্ঠ স্থানে পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গ৷ এবার বাকিদের টপকে শীর্ষে পৌঁছাতে লড়াই শুরু৷ আর সেই লড়াই জিততে বাংলার অপরিমেয় সম্পদ-সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে রাজ্যের বাইরে পাড়ি দিয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতর৷ দেশের প্রতিটি রাজ্যে ও পরবর্তীতে বিদেশে গিয়ে রোড শো করে বাংলার চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেই এই অভিযান৷ রাজ্য পর্যটন দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা সুরজিৎ বসুর নেতৃত্বে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে অভিযানে শামিল করা হয়েছে বেসরকারি পর্যটন সংস্থার প্রতিনিধিদেরও৷ সৈন্য-সামন্ত নিয়ে শুরু হওয়া দেশজুড়ে শুরু হওয়া যে অভিযানকে ‘যুদ্ধযাত্রা’ হিসাবেই দেখছেন বিভাগীয় কর্তারা৷ বাংলার পর্যটন নিয়ে এহেন আগ্রাসী বিপণন কৌশলে ভিন রাজ্যে হানাদারিকে ‘নজিরবিহীন ঘটনা’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন রাজ্যের পর্যটন শিল্পমহল৷
হায়দরাবাদ হয়ে ‘টিম বেঙ্গল’ দিল্লি, চন্ডীগড় ঘুরে আপাতত ঘাঁটি গেড়েছে রাজস্থানের জয়পুরে৷ দুর্গ-প্রাসাদ-মরুভুমির যে রাজপুতানা পর্যটন মানচিত্রে সমীহ জাগানো নাম৷ জয়পুর থেকে টেলিফোনে দলের অন্যতম এক সদস্যের দাবি, “অপ্রত্যাশিত সাড়া মিলছে সর্বত্র৷ তার মধ্যে জয়পুরে স্থানীয় টুর অপারেটররা প্রায় লাইন দিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন৷ চন্ডীগড়ের রোড শো-তে উপস্থিতি একটু কম হলেও উৎসাহ দেখার মতো৷ আর দিল্লির অভিজ্ঞতা তো আমাদের সব প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে৷” প্রায় দু’হাজার মাইল দূর থেকে আধিকারিকের উচ্ছ্বাসকে দূরাভাষের এপ্রান্তে অনুভব করতে অসুবিধা হয়নি৷
বাংলা পর্যটনের এই আগ্রাসী বিপণনকে ‘অভিযান’ বা ‘হানাদারি’ বলতে আপত্তি রয়েছে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের৷ তাঁর কথায়, ‘‘এটা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার চেষ্টা৷” মন্ত্রী বলছেন, “বাংলাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে ‘বিশ্ব বাংলা’ ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর নির্দেশ, এই ‘বিশ্ব বাংলা’র মধ্যে দিয়ে বাংলার যা কিছু সুন্দর, তাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হবে৷ সেই নির্দেশ অনুযায়ীই রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে বাংলার যা কিছু সৌন্দর্য-সম্পদকে পরিচিত করতেই এই রোড শো-র আয়োজন৷”
রাজ্য পর্যটন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, দিল্লি-মুম্বাই-চেন্নাই’এর মতো এ-১ শহরগুলির পরিবর্তে চন্ডীগড়়, জয়পুর, সুরাট, পুণে, কোচির মতো ‘বি ক্লাস’ বা মাঝারি মাপের শহরগুলিকেই পর্যটক টানার জন্য চাঁদমারি করেছেন তাঁরা৷ সে জন্য এই সব শহরেই রোড শো-র আয়োজন করা হচ্ছে৷ “আমাদের সমীক্ষা বলছে এই সব শহর থেকে প্রতি বছর বহু মানুষ বেড়াতে যান৷ যে সংখ্যাটা মিলিতভাবে দেশের প্রধান পাঁচ বড় শহর থেকে বেশি৷ এই পর্যটকদের ধরতেই সরাসরি তাঁদের দরজায় হাজির হচ্ছি আমরা৷” বলছেন ওই কর্তা৷ উত্তরবঙ্গে পর্যটন শিল্পের পরিচিত ব্যক্তিত্ব তথা টুর অপারেটর সংস্থার ‘এটওয়া’-র অন্যতম প্রধান কর্তা রাজ বসুর কথায়, “আধুনিক পর্যটন শিল্পে এটাই গোটা দুনিয়ায় স্বীকৃত পতি৷ পর্যটন মেলায় অনেকের মাঝখানে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ কিন্তু পৃথক রোড শো করলে সেই ভয়টা থাকে না৷ কার্যকরীও হয় পরিকল্পনা৷ আগের সরকার আসলে পর্যটনকে কোনদিনই গুরুত্ব দেয়নি৷ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিতেই রাজ্যের পর্যটন শিল্প শুধু জেগে ওঠেনি, রীতিমতো দৌড়চ্ছে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.