গৌতম ভট্টাচার্য: ছিপছিপে তরুণী। কড়া রোদে বালির এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। বিলাসবহুল প্রচার গাড়ির বদলে বাইকেই বেশি স্বচ্ছন্দ। দুই চাকার বাহনে চেপেই তিনি উপস্থিত হলেন সিপিএমের (CPM) নির্বাচনী কেন্দ্রে। “ফ্যাসিবাদী, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরোধী বামেরা”, বললেন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের ফেসবুক লাইভে।
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী দীপ্সিতা। ডোমজুড়ের দু’বারের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক পদ্মনীধি ধরের নাতনি। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (JNU) থেকে উদ্বাস্তু জনসংখ্যার ওপর পিএইচডি করছেন। বাংলা, হিন্দি, ইংরাজির পাশাপাশি মালয়ালম ভাষাও বলতে পারেন। একসময়ের লাল দুর্গ বালি (Bally) পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব এই ‘তরুণ তুর্কি’র কাঁধে দিয়েছে আলিমুদ্দিন। সেই দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই নিজের সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) বিঁধলেন দীপ্সিতা। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনই দাবি তাঁর। বলেন, “গত ১০ বছরে যে দাঙ্গা বাংলায় হয়েছে, ৩৪ বছরে তা হয়নি।” এর জন্য তিনি কখনও মতুয়া প্রীতি, কখনও ইমামদের ভাতা দেওয়া, আবার কখনও পুরোহিত ভাতা দেওয়ার উদ্যোগকে দুষেছেন। এবিষয়ে নিজের দাদুর কথাও উল্লেখ করেন দীপ্সিতা। ডোমজুড়ের দু’বারের সিপিএম বিধায়ক ছিলেন পদ্মনীধি ধর। বাড়ির ছোটদের তাঁর কড়া নির্দেশ দেওয়া ছিল, বাড়িতে কেউ উপহার দিতে এলে যেন তা না নেওয়া হয়।
বামেদের ৩৪ বছরের শাসনে যে ভুল হয়নি, তা মনে করেন না দীপ্সিতা। কিন্তু তাঁর দাবি, বামেদের সময় এই সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ ছিল বলেই দাবি সিপিএম প্রার্থীর (CPM Candidate)। কিন্তু বিজেপির (BJP) শক্তি ও তৃণমূলের (TMC) প্রভাবের মধ্যে সংযুক্ত মোর্চা কি আদৌ ক্ষমতায় ফিরতে পারবে? তারুণ্যের প্রভাব কতটা কাজে লাগবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে দীপ্সিতা জানান, বাংলায় ক্ষমতা হারানোর পর প্রথম পাঁচ বছর বামেদের খুব খারাপ সময় ছিল। কিন্তু পরে তাঁরা বিরোধী রাজনীতিটা বুঝতে শিখেছে। সংগ্রামের ভিত শক্ত হয়েছে। নবান্ন অভিযানে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee) যেভাবে লড়াই করেছেন। তিনিই আসল তারকা। করোনা (Corona Virus) কালেও কমিউনিটি ক্যান্টিনের মতো উদ্যোগে বামেদের পাশে পেয়েছেন মানুষ। সময়ের দাবি মেনে আবার টুম্পা গানেও প্রচার শুরু হয়েছে। একটি লাল ঝান্ডা থাকলেও মানুষ তাতে বিশ্বাস করবে বলে দাবি দীপ্সিতার।
সাক্ষাৎকারে আব্বাস সিদ্দিকির (Abbas siddiqui) দলের সঙ্গে বামেদের জোট প্রসঙ্গেও মতামত ব্যক্ত করেন দীপ্সিতা। জানান, কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের মতো ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রুখতে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তির এক হওয়া প্রয়োজন। তবে হ্যাঁ, আব্বাসের মহিলাকে গাছে বেঁধে রাখার মতো মন্তব্যের সমর্থন তিনি আজও করেন না। আবার কংগ্রেসের জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্তেরও বিরোধী। আব্বাস যদি মুসলমান দল গঠনের কথা বলতেন তাহলে অবশ্যই তাঁর বিরোধিতা করতেন বলে জানান দীপ্সিতা। কিন্তু ইমাম কিংবা মোয়াজ্জেম ভাতার মতো ধর্মীয় তাস ব্যবহার করে ভোট টানার পক্ষেও তিনি নন বলে জানান বালির সিপিএম প্রার্থী।
জেএনইউ-র এসএফআই (SFI) ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বালির এই কন্যা। পরে সংগঠনের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক হন। জেএনইউ-তে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সিপিএম নেতৃত্বের নজরে পড়ে যান কলকাতার আশুতোষ কলেজের এই প্রাক্তনী। খাদ্যরসিক দীপ্সিতার প্রিয় খাবার বিরিয়ানি। জীবনে প্রথমবার সংসদীয় রাজনীতির নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় পুরো সময়টাই নিজের কেন্দ্রে দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের শুভকামনা পাচ্ছেন। অনেকেই আবার তাঁর প্রচারে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। লড়াকু ছাত্রনেত্রীকে নিয়ে আশাবাদী আলিমুদ্দিনের ভোট ম্যানেজারও।
দেখুন ভিডিও –
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.