সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চব্বিশের লোকসভা ম্যাজিক দেখিয়েছে। ফের একবার আশা জাগিয়ে বাম, কংগ্রেস, বিজেপির মুখ থেকে গ্রাস কেড়ে নিয়েছে বঙ্গবাসী। বিজেপির নিশীথ প্রামানিক, সুভাষ সরকারের মতো হেভিওয়েটদের প্রত্যাখান করেছে। বামেদের তরুণ তুর্কির পাশাপাশি মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী মতো নেতাকে হারিয়েছে বাংলার জনগণ। খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই হার মেনেছেন অধীর চৌধুরীও। আর এই হার শুধুমাত্র যে নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছে, তা নয়। সমর্থকদের মন ভেঙেছে তা নয়, বরং প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে এই নেতাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও।
লোকসভা ভোটের পর এই তালিকা নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমেই যার কথা বলতে হয় তিনি দিলীপ ঘোষ। বঙ্গ বিজেপির ‘তারকা’। বাংলা থেকে বিজেপির ১৯ সাংসদকে সংসদে পাঠাতে বড় ভূমিকা ছিল যার। বুথে বুথে সংগঠন তৈরি থেকে রাজ্যে বিজেপিকে প্রধান বিরোধী আসনে বসানোর কাজটাও সেরেছিলেন তিনি। ভোটে লড়াই করে কোনও দিনও হারেননি দিলীপ ঘোষ। সেই ‘তারকা’কেই এবার নিজের গড় মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে আনা হয়। আর তাতেই ইতিহাস বদল। হার মানতে হয় তাঁকে। ইতিপূর্বে রাজ্য় বিজেপি সভাপতি পদ থেকে সরতে হয়েছে দিলীপকে। হারিয়েছেন সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদও। রাজ্যেই বিজেপির অন্দরে কোনঠাসা তিনি। এবার সাংসদ পদ হারানোর পর প্রশ্নের মুখে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যত। তিনি আরএসএসে ফিরে যাবেন নাকি দলের রাশ ফের আসবে তাঁর হাতে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বহরমপুরের দীর্ঘদিনের সাংসদ। লাগাতার তৃণমূল বিরোধিতা করায় হাইকমান্ডের রোষের মুখে পড়েছেন। এবার ভোটের লড়াইয়ে হার মানতে হয়েছে তাঁকেও। বলেছিলেন, ভোটে হারলে বাদাম বিক্রি করবেন। হারের পর অবশ্য বলছেন, রাজনীতি ছাড়া তিনি কিছুই করতে পারেন না। ফলে এবার তিনি কী করবেন, সেদিকে নজর থাকবে।
শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলান। লোকসভা ভোটে তাঁর কাঁধে গুরুদায়িত্ব ছিল। রাজ্যে বিজেপির আসন বাড়ানোর দায়িত্ব ছিল তাঁর উপরই। নিজের গড়ে দুটি আসনে জেতানো ছাড়া, খুব বেশি ক্যারিশমা দেখাতে পারেননি তিনি। ফলে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর উপর আস্থা রাখবে নাকি দলে গুরুত্ব কমবে তাঁর, এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
সুভাষ সরকার ছিলেন বাঁকুড়ার সাংসদ। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। কোচবিহারের সাংসদ ছিলেন নিশীথ প্রামাণিক। তৃণমূল থেকে এসেছিলেন বিজেপিতে। মন্ত্রীও হয়েছিলেন। খোদ অমিত শাহের ডেপুটি হন। কিন্তু এবার ভোটে পরাস্ত হয়েছেন দুজনেই।। ফলে দল তাঁদের পুনর্বাসন দেয় নাকি গুরুত্ব হারান তিনি, সেটাও দেখার।
মহম্মদ সেলিম সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল লাল সৈনিকরা। কিন্তু কোথায় কী! বাংলার বিধানসভা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে বামেরা। লোকসভাতেও তাঁরা মহাশূন্যে। নিজে তো জিতলেনই না, জেতাতে পারলেন না দলের কোনও নেতাদেরও। সুজন চক্রবর্তীরও একই দশা। দমদম আসনে তৃতীয় হয়েছেন তিনি। ফলে বাংলার রাজনীতিতে এই দুই পোড়খাওয়া বাম নেতার কতটা গুরুত্ব থাকবে, সেটা বেশ চিন্তার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.