বাবুল হক, মালদহ: লক্ষ টাকার বিনিময়ে ‘কাস্তে হাতুড়ি’ প্রতীক! প্রতিবাদে বিক্ষোভ, অবরোধ। পুড়ল সিপিএম নেতার ছবিও। মনোনয়ন পর্বের শেষলগ্নে শোরগোল মালদহের বাম শিবিরে।
বামেরা নাকি প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনই দাবি যখন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ফিরছে, ঠিক তখনই মনোনয়ন পর্বের (Bengal Panchayat Election) শেষ মুহূর্তে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে টিকিট বিক্রির অভিযোগ উঠল সিপিএমের বিরুদ্ধে! দলের স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে টিকিট বিক্রির অভিযোগ তুলে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন সিপিএমের একাংশ নেতাকর্মী। মঙ্গলবার সকাল ন’টা নাগাদ বামকর্মীদের এই বিক্ষোভের জেরে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নম্বর ব্লকের রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানে বিধুয়া-ডাঙ্গিলা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। দলীয় কিছু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বামকর্মীরা। রাস্তার টায়ার জ্বালিয়ে তাঁরা অবরোধ করেন। তার জেরে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। শুধু তা-ই নয়, ওই এলাকার দু’জন সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বিক্রির অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যেই তাঁদের দু’জনের ছবি পুড়িয়ে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা।
তাঁদের অভিযোগ, দলের যোগ্য কর্মীদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের প্রার্থী করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ‘কাস্তে হাতুড়ি’ প্রতীক দেওয়া হয়েছে। ওই অযোগ্য প্রার্থীর হয়ে দলের কেউ ভোট চাইতে গ্রামে এলে তাঁকে গাছে বেঁধে জুতোপেটা করার নিদান দিয়েছেন বামকর্মীরা। এদিন বিক্ষোভকারীরা জানান, দলের নির্দেশে রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে সিপিএম প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেশ করেন সুরভি খাতুন। ভোট প্রচারে নেমেও পড়েছিলেন তিনি। এর পরেই দল সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে। তাঁকে আর টিকিট দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন রশিদাবাদ অঞ্চলের সিপিএমের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান। তবে কী কারণে টিকিট দেওয়া হবে না, তা তিনি স্পষ্ট করে কর্মীদের বলেননি বলে তাঁদের অভিযোগ।
প্রতিবাদীদের একটাই দাবি, “কেন যোগ্য প্রার্থী সুরভি খাতুনকে টিকিট না দিয়ে অন্যজনকে টিকিট দেওয়া হল? এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে।” বিক্ষোভকারী সামিউল আলি বলৈ, “দলের হাইকম্যান্ডরা বুথে বসে সকলের সামনে টিকিট দেওয়ার কথা দিয়েছিলেন। তাঁদের কথামতো ১৫ জুন ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা করেছিলেন জোট প্রার্থী সুরভি খাতুন। এরপর দল সিম্বল দিতে চাইছে না। অন্যজনকে সিম্বল দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।”
সিপিএম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান বলেন, “যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা দলের কেউ নন। টাকার বিনিময়ে টিকিট বিক্রির অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। যে প্রার্থীকে টিকিট দেওয়ার দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সেই সুরভি খাতুনের বাড়ি মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। তাই দলের সিদ্ধান্তে তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য তাঁরা এই ধরনের বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য জামিল ফিরদৌস বলেন, “যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তারা দলের কেউ নন, দল তাঁদেরকে চেনে না। তাঁরা হয়তো শাসকদলের হয়ে কাজ করছেন। দলের বদনাম করার জন্য বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.