Advertisement
Advertisement
করোনা

ভিনরাজ্যে মৃত্যু, দেহ গ্রামে ফেরানো ও সৎকারে বাধা এলাকাবাসীর

ময়নাগুড়িতে করোনা গুজবে বিপত্তি।

Bengal man dies outside state, natives refuse to cremate body

ছবি : প্রতীকী

Published by: Paramita Paul
  • Posted:May 1, 2020 3:13 pm
  • Updated:May 1, 2020 3:14 pm  

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ভিন রাজ্যের হাসপাতালে অন্য রোগে মরেও বিপদ। করোনাতঙ্কের গুজব ও গ্রামের মাতব্বরদের ফতোয়া সামলে ভিটেতে দেহ ফেরাতে কালঘাম ছুটল পরিবারের। জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের কন্যাবাড়ি গ্রামে শুক্রবার গভীর রাতের ঘটনা। দেহ ফেরানো সম্ভব হলেও নিরুপায় হয়ে শেষকৃত্য করতে হয়েছে প্রথা বহির্ভূতভাবেই।

কথায় বলে মরেও শান্তি নেই! এতদিন যা ছিল স্তোকবাক্য করোনাতঙ্কে সেটাই এখন নির্মম বাস্তব। কোভিড-১৯ (COVID-19) ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু হলে প্রশাসনের তরফে যেভাবেই হোক শেষকৃত্যের কাজ সারা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ রোগে মৃত্যুও করোনা গুজবে মিলেমিশে একাকার হয়ে কত বড় বিপর্যয়ের ডেকে আনছে সেটা হাড়েমজ্জায় টের পেলেন কন্যাবাড়ি গ্রামের মল্লিক পরিবারের।

Advertisement

[আরও পড়ুন : করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় দাহ করার সমস্যা, দেহ হাসপাতালে রেখেই পালাল আত্মীয়রা]

প্রায় দেড় বছর থেকে ফুসফুস ও যকৃতের সংক্রমণে ভুগছিলেন এলাকার বাসিন্দা ৫২ বছরের সুনীল মল্লিক। বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা চলছিল। ১৫ মার্চ স্ত্রী, ভাইপো এবং পড়শি এক যুবক তাকে ফের চেকআপে নিয়ে যান। এ যাত্রায় ২০ মার্চ তাকে বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করে চিকিৎসা শুরু হয়। এর মধ্যে ২২ মার্চ লকডাউনের খাড়া নামে। পড়শিরা প্রত্যেকে সমস্যার খবর নিয়েছেন। ওই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু ২৮ এপ্রিল সুনীলবাবুর মৃত্যুর খবর মিলতে পুরো ছবি পালটে যায়। ঘটনার পর অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে দেহ নিয়ে রওনা দেন স্ত্রী। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের বাড়িতে পৌছে শেষকৃত্য হবে শুনে মঙ্গলবার পড়শিরা মল্লিক পরিবারকে সাফ জানিয়ে দেয় এলাকায় দেহ আনা যাবে না। শুধু তাই নয়। বুধবার সালিশি সভা করে রীতিমতো ঘোষণা করা হয় কিছুতেই দেহ এলাকায় ফিরবে না। অন্য কোথাও কবর দেওয়া হোক। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিশাহারা দশা হয় পুলিশ প্রশাসনের। চলে দফায় দফায় আলোচনা। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী নিরুপায় হয়ে প্রশাসনের কর্তাদের দেখিয়ে দেন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তেওয়ারি বলেন, “স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন বিষয়টি মিটিয়েছেন।” জেলা পুলিশ সুপার মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। বিধায়ক জানিয়েছেন, শুধুমাত্র সুনীলবাবুর ঘটনা নয়। প্রতিদিন গ্রামগুলো থেকে একই সমস্যার কথা শুনতে হচ্ছে।

[আরও পড়ুন : ঘূর্ণাবর্তের জেরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ঝোড়ো বৃষ্টির পূর্বাভাস, জানাল হাওয়া অফিস]

স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা ওই বিষয়ে মুখ না খুললেও জানা গিয়েছে, বুধবার ময়নাগুড়ির আমগুড়ি গ্রামে দেহ দাহ করা নিয়ে গোলমাল পুলিশকে সামাল দিতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝামেলা হয়েছে দোমহনিতে। সুনীলবাবুর মেয়ে জামাই ধীরাজ বর্মন জানিয়েছেন, গ্রামবাসীর সভায় হাসপাতালের সব নথি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমে কেউ মানতে রাজি হয়নি। পরে পুলিশের সহযোগিতায় সমস্যা মিটছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রামে দেহ পৌছয়। শুক্রবার রাত দুটো নাগাদ অন্তোষ্টি ক্রিয়ার পর দেহ নিয়ে যে তিনজন বেঙ্গালুরু থেকে ফিরেছেন তাদের স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে প্রাথমিক পরীক্ষার পর হোম কোয়ারেনন্টাইনে থাকতে বলা হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা কুমুদ রায় বলেন, “কেউ মারা গেলেই যেভাবে করোনার রব উঠছে মেনে নেওয়া যায় না।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement