স্টাফ রিপোর্টার: কেন্দ্রের বঞ্চনার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন মেনে আবারও একযোগে দিল্লি দরবারের প্রস্তুতি শুরু হল৷ কংগ্রেস যেমন সেই আর্জিতে সায় দিয়েছে, তেমনই সিপিএমের বিধায়ক সবাইকে নিয়ে দিল্লি দরবারে যেতে চেয়েছেন৷ শনিবার বাজেট আলোচনায় কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া বরাদ্দের তুলনায় দফতরওয়ারি কম খরচ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ সেই প্রসঙ্গেই বলতে ওঠেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ তিনি তথ্য-সহ দাবি করেন, কেন্দ্র বাজেটে বহু ক্ষেত্রে চার ভাগ বা তিনভাগের একভাগ টাকা দিয়েছে৷ তাঁর যুক্তি, এই গ্যাপের জন্য করের বা ধার করে টাকা জোগান দিতে হয়৷ কেন্দ্রীয় বঞ্চনা সত্ত্বেও রাজ্য নিজে থেকে টাকা জোগাড় করে উন্নয়নপ্রকল্পে খরচ করেছে৷
অমিত মিত্র হিসাব দিয়েছেন, গত ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে কৃষি বিপণন দফতরের জন্য একশো কোটি টাকা দেওয়ার কথা বললেও দিয়েছে ৩৮.৩৩ কোটি টাকা৷ তাঁর বক্তব্য, “মানসবাবুদের ভ্রান্তি দূর করার জন্যই বললাম৷” তবে মানসবাবু তিন বছরের ক্যাগ রিপোর্ট প্রকাশ হলেই সব তথ্য স্পষ্ট হবে বলে মনে করেন৷ তার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “কেন্দ্রের অনুদান কমেছে খুব খারাপভাবে৷ ইউপিএ সরকার থেকেও পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমিয়েছে৷ শুধু চিঠি দিলেই হবে না, প্রতিবাদ হোক৷ চলুন, দেশবিরোধী, সার্বভৌমত্ব নষ্টের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ও অনুদান নিয়ে প্রতিবাদ করি৷ কংগ্রেস সাহায্য করতে প্রস্তুত৷” তবে শাসকদলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ চেয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, “আমরা নিমন্ত্রিত নই৷ আগবাড়িয়ে কী খেতে যাব?” বাজেট আলোচনায় অবশ্য মানস ভুঁইয়া সিপিএমকে খোঁচাও দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, “ঋণ নিয়ে সুজনবাবুদের বক্তব্য রয়েছে৷ ওঁদের যুক্তি, ওঁরা ৩৪ বছরে যা ঋণ নিয়েছেন, পাঁচ বছরেই এঁরা নিয়েছেন৷ ঋণ নেওয়ায় কে ফার্স্ট, তা বলতে পারব না৷” বিজেপির দিলীপ ঘোষও ঋণ প্রসঙ্গ তুলেই খোঁচা দিয়েছেন বামকে৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি বাজেট আলোচনায় স্পষ্টভাবে কর্মসংস্থানের বাস্তব হদিশ জানতে চেয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, “বাজেটের কল্পনা ও বাস্তবে গ্যাপ রয়েছে৷ ধার নিয়ে ধার শোধ করা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়৷ ঋণ নেওয়ায় কে ফার্স্ট, সেই তর্ক পরে হবে৷ নির্বাচন ছিল না, বাস্তবমুখী হতে পারতেন৷ ভারতের সরকার তো সাহায্য করে৷ কেন্দ্রের কোনও না কোনও মন্ত্রী প্রতি সপ্তাহে রাজ্যে আসছেন৷ আমরাও সাহায্য করতে রাজি আছি৷” সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্য আবার কংগ্রেসের সূত্র ধরেই বলেছেন, “চলুন, একসঙ্গে রাজ্যের স্বার্থে দিল্লিতে যাই৷”
এদিন আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য উল্লেখ করেছেন, অমিত মিত্র বাম সরকারের অর্থমন্ত্রীর তুলনায় এগিয়ে গিয়ে শুরু করেছেন৷ তাঁর ভাষায়, “টেনিসের মতো অ্যাডভ্যাণ্টেজ”৷ বলেছেন, “এখন লুম্পেনের রাজনীতি শুরু হয়েছে৷ সিন্ডিকেট অর্থনীতি হচ্ছে৷ বিধায়কদের প্রত্যেকের স্করপিও গাড়ি ২০ বছরের বিধায়ক জীবনে দেখিনি৷” কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো বেআইনি ইটভাটা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ অন্যদিকে, তৃণমূলের জয়ন্ত নস্কর আলোচনায় বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে তাঁর উপর হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন৷ তবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলেন, “এটি বাজেটের উপর আলোচনা৷ সুজন চক্রবর্তীর উপর আলোচনা নয়৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.