সন্দীপ চক্রবর্তী: চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও রাজ্যের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে এবার বাধা পুরনো দেনা৷ নোট বাতিলের প্রভাবে রাজ্যের কোষাগারে এমনিতেই ‘ক্ষতি’ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা৷ এবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা৷ এপ্রিলের শুরুতেই রাজ্যের কোষাগার থেকে দেনার কারণে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কেটে নেবে কেন্দ্র৷
আর্থিক বছর শেষের আগেই তাই নয়া অর্থ-সংকট ভাবাচ্ছে নবান্নকে৷ বারবার কেন্দ্রের বৈষম্য ও পুরনো দেনার কারণে বেহাল অর্থ-দৈন্য নিয়ে কেন্দ্রের কাছে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে সরব হতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কেন্দ্রের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের জের রাজ্যের বাজেটেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী যদিও উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা মানতে চাইছেন না৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এমন নাছোড় মনোভাবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ নবান্নের অর্থ দফতরের আধিকারিকদের৷
নবান্ন সূত্রে খবর, বাম আমলের বেশ কিছু ঋণ ‘টার্ম ডিপোজিট’ হিসাবে এবার মেয়াদে পড়ছে বা ‘ম্যাচিওর’ করেছে৷ ফলে একধাক্কায় বেড়ে যাচ্ছে সুদ ও আসলের অংশ৷ তাই আর্থিক বছরের শুরুতেই ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণের আসলের একটি অংশ ও সুদ বাবদ জমা দিতে হবে৷ এখানে উল্লেখযোগ্য, ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরেই কেন্দ্রকে ৭০ হাজার কোটি টাকা দিতে হতে পারে বলে হিসাব কষেছে রাজ্যের অর্থ দফতর৷ টাকা কেটে নেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ মমতার নেতৃত্বে সরকার গড়ার পর প্রথম বছরে পরিমাণ ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা৷ বস্তুত, পাঁচ বছরেই এক্ষেত্রে বৃদ্ধি প্রায় ১০৮ শতাংশ৷ লাফিয়ে লাফিয়ে যে গাণিতিক হারে সুদ বাড়ছে, তাতেই উদ্বেগ বাড়ছে৷ আধিকারিকদের একটা বড় অংশের আশঙ্কা, কেন্দ্র সাহায্য না করলে রাজ্যের অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে বাধ্য৷
অবিলম্বে দরকার, অন্তত চার বছরের ‘মোরাটোরিয়াম’৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে, কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতে যা ভাবাটাই দুষ্কর৷ না পেলে, পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ তবে অমিত মিত্র মূলত কর সরলীকরণ ও বেশি সংখ্যক মানুষকে করের আওতায় আনার ফলে রাজস্ব আদায় ব্যাপক হারে বেড়েছে৷ সারা দেশে এ ব্যাপারে বাংলা নজির হয়েছে৷ রাজ্যের হিসাব, গত পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায় প্রায় এক লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে৷ করের শেয়ার বেড়েছে৷ রাজস্ব ঘাটতি কমেছে৷ কিন্তু অর্থনীতিতে এই হার ধরে রাখা মুশকিল বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা৷
আর্থিক বোঝা-বৃদ্ধির বিষয়ে জেনেও জানুয়ারি থেকে রাজ্যের সরকারি কর্মচারী, পেনশনভোগীদের দশ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এর ফলে বছরে বাড়তি প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বোঝা মাথায় চাপবে৷ নবান্ন সূত্রে খবর, অর্থ দফতরের কয়েকজন আধিকারিক এখনই দশ শতাংশ ডিএ দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না৷ তবে কেন্দ্র যেভাবে নতুন নতুন বোঝা চাপাচ্ছে, তাতেই সমস্যা বাড়ছে৷ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হয়েছে৷ কেন্দ্র বাদ দিয়েছে আরও বহু প্রকল্প৷ রাজ্য চাইলেই সেই সব প্রকল্প ‘কণ্টিনিউ’ করতে পারবে না৷ ডিসেম্বরের শেষ দিকে কেন্দ্রের অর্থসচিব জঙ্গলমহলে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের খরচ চেয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন৷ বলা হয়েছিল, সরাসরি ট্রেজারি থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে৷ তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মুখ্যসচিব৷ নোট বাতিলের প্রেক্ষিতে নভেম্বর মাসের ৯ তারিখ থেকে জানুয়ারি ৮ তারিখ পর্যন্ত দুই মাসে সম্ভাবনার তুলনায় বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায় কমেছে৷ টাকার নিরিখে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা৷ সবমিলিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও দেনার কারণেই এক বছরে রাজ্যের প্রাপ্য আদায় কম ও পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে হিসাব৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.