Advertisement
Advertisement
হকার

লকডাউনে মার খেয়েছে চৈত্র সেল, রাজ্যে ক্ষতি পাঁচ হাজার কোটি টাকা

ক্ষতির প্রভাব পড়তে পারে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পেও

Bengal hawkers suffer staggering loses due to lockdown
Published by: Paramita Paul
  • Posted:April 17, 2020 3:51 pm
  • Updated:April 17, 2020 3:51 pm  

সন্দীপ চক্রবর্তী: করোনার কোপে পড়ে দেশের অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি। ক্ষুদ্রশিল্প থেকে আবাসন, সর্বত্রই মন্দার প্রকোপ পড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে সারা রাজ্যে শুধু চৈত্র সেলের হকারি ব্যবসা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমান এতটাই যে, গত ৫০ বছরে এই প্রথম সরানো পুঁজিতে অর্থাৎ পরিবারের জন্য জমানো কার্যত লক্ষ্মীর ভাঁড়ারেই হাত দিতে হল হকারদের। তাই কেন্দ্রের আরবান লাইভলিহুড প্রকল্পে হকারদের জন্য বরাদ্দ পাঁচ শতাংশ টাকা রাজ্যের মারফত অবস্থার উন্নতির জন্য ব্যয় করার দাবি তুলেছেন হকাররা।

চৈত্রের এই সেলের দিকেই তাকিয়ে থাকেন ওঁরা। অন্তত চার মাসের সংসার খরচ উঠে আসে এই এক মাসে। কিন্তু এবার লকডাউনে ফাঁকা নিউ মার্কেট বা হাতিবাগান, গড়িয়াহাট। পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতায় হকারের সংখ্যা দুই লাখ পঁচাত্তর হাজার। গোটা রাজ্যের সংখ্যাটা অন্তত ১৬ লাখ। আর দেশে প্রায় চার কোটি হকার রয়েছেন। হকার সংগ্রাম কমিটির তথ্য বলছে, শুধু গড়িয়াহাট এলাকাতে দেশপ্রিয় পার্ক পর্যন্ত অন্তত পাঁচ হাজার হকার প্রতিদিনের রুটি রুজির সন্ধানে আসেন। চৈত্র সেলের সময়ে জামা কাপড়, প্লাস্টিক বা বাসন, জুতো বেল্ট সামগ্রীর বিক্রেতাদের গড়ে প্রতিদিন ১৪/১৫০০০ টাকা করে বিক্রি হয়। জায়গার পার্থক্যে অবশ্যই বিক্রির বদল ঘটে। ধর্মতলার গ্র্যান্ডের নিচে বা নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের সঙ্গে অন্য ক্ষেত্রের তফাৎ থাকেই। গত বছর এগুলোর কোথাও ৩০, কোথাও ২০ হাজার টাকাও ব্যবসা হয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন : ‘মাস্ক বা কাপড়ে মুখ ঢাকেননি কেন?’ রাস্তায় নেমে আমজনতাকে ধমক জেলাশাসকের]

হকার সংগ্রাম কমিটির শীর্ষ কর্তা শক্তিমান ঘোষ জানালেন, মোটামুটি ভাবে ২৫-৩০ শতাংশ হকার পোশাক, প্লাস্টিক ও জুতো বা বেল্ট বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। তার হিসেব, প্রতিদিন ১৫ হাজার বিক্রি ধরলেও এক মাসে শুধু কলকাতা, সল্টলেক, নিউটাউন ও আশপাশে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাঁর কথায়, “এই ক্ষতি থেকে হকারদের পরিবারকে টেনে তোলা কঠিন। আগামী চার মাস কীভাবে সংসার চলবে জানা নেই। এই প্রথম পুঁজিতে হাত দিতে হল।” হকারদের এই ক্ষতির প্রভাব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের উপরও পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূলত এই শিল্প-কারখানাগুলি থেকেই কম দামে সামগ্রী ফুটপাথে বিক্রি হয়। লো সার্কিট বাজারের উপর দেশের প্রায় ৭৭ শতাংশ অর্থাৎ মোট ৮০ কোটি মানুষ নির্ভর করেন। 

মহিলা হকার সংগ্রাম কমিটির রেখা বারিক আলাদাভাবে মহিলা হকারদের পাশে থাকার কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন। তেমনই সারা বাংলা হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর দাস মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে হকাররা যাতে নিখরচায় রেশন পান তার দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “যা ক্ষতি হচ্ছে পোষানো যাবে না। আরও লক ডাউন বাড়ানোয় ক্ষতি রাজ্যে পাঁচ হাজার কোটির অনেক বেশি হচ্ছে। কারণ, ইদের ব্যবসাও হবে না। মহাজনের থেকে চড়া সুদে ধার নিয়েছেন অনেকে। রাস্তায় বসবেন এরা। মুখ্যমন্ত্রী অনুদান দেবেন বলেছেন। এঁদের নাম নথিভুক্ত করার কাজও বাকি।”

[আরও পড়ুন : সুরাহা র‌্যাপিড টেস্টেই, কেরলের পথে হেঁটে করোনাকে জব্দ করা শুরু রাজ্যে]

পুজোর সময় কী হবে কে জানে! তবে হকার সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন ৫০০টি পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও শক্তিমানবাবু নিজের চিকিৎসার টাকা থেকে তুলে দিচ্ছেন চাল, ডাল আলু, তেল। ইতিমধ্যে নিজের অপারেশনের এক লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমার ৫০ বছরের এই হকারদের সঙ্গে যুক্ত জীবনে এমনভাবে পুঁজি ধরতে দেখি নি।” লকডাউন পরবর্তী সময় পরিস্থিতিটা যে আরও কঠিন হতে চলেছে, তা এই পরিসংখ্যান থেকে কার্যত স্পষ্ট।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement