গৌতম ব্রহ্ম: অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেলজয় চিন্তায় ফেলল বাংলার চিকিৎসকদের! চিন্তা না বলে অবশ্য দুশ্চিন্তা বলাই ভাল। কিন্তু কেন? কারণ, জিষ্ণু দাস, অভিজিৎ চৌধুরিদের সঙ্গে জোট বেঁধে এই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদই বাংলার গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকদের (যাদের সাধারণত হাতুড়ে বা ‘কোয়াক’ নামে সম্বোধিত করা হয়) প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করছেন। এমনকী, আন্তর্জাতিক পেপারও রয়েছে।
গ্রামীণ চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নোবেল জয়ের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পর্যবেক্ষণ, গ্রামাঞ্চলের ৮০ শতাংশ মানুষ এই স্বশিক্ষিত স্বাস্থ্য পরিষেবকদের উপরই নির্ভরশীল। এঁদের অচ্ছুত করে রেখে গরিবের কোনও লাভ নেই। বরং তাঁদের ট্রেনিং দিয়ে একটা বৈধ জায়গা করে দেওয়াই ভাল। এখানেই গোল বেধেছে। বাংলার চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম’ বুঝতে পারছে না, অভিজিৎবাবুর নোবেলজয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেবেন। ফোরামের সম্পাদক ডা. কৌশিক চাকী জানিয়েছেন, হাতুড়ে প্রশিক্ষণের সঙ্গে নোবেলজয়ীর যোগসূত্র কতটা তা জানা নেই। তবে, আমরা এখনও আগের মতোই বিরোধিতা করছি। গরিবের চিকিৎসার ভার কেন নন-কোয়ালিফায়েড’ হাতুড়েদের উপর থাকবে?
গ্রামীণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ শুরু সেই ২০০৭ সালে বীরভূমে। পরবর্তীতে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগণাতেও কোর্স শুরু হয়। আবাসিক ৯ মাসের কোর্স, ৫০ জনের ব্যাচ। বাঁকুড়ার ছাতনার ফুলবেড়িয়া গ্রামে ১০ মাসের আবাসিক কোর্স করানো হয়েছে। অভিজিৎ চৌধুরির দাবি, তাঁরা চিকিৎসাকর্মী তৈরি করছেন, চিকিৎসক নয়। পাস করে নামের আগে ‘ডা.’ লেখা নিষিদ্ধ। নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে রোগের লক্ষণের ভিত্তিতে কিছু নির্দিষ্ট অসুখের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট ওষুধ দিতে পারবেন এই স্বাস্থ্যসেবকরা।
দুই অভিজিৎই জানালেন, ভুল চিকিৎসা ও অকারণ ওষুধ লেখা কমিয়ে রোগীর ক্ষতি কমানোই মূল উদ্দেশ্য। তাছাড়া এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রামীণ চিকিৎসার অনিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্র ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে আসবে। কৌশিকবাবু অবশ্য তা মানছেন না। তাঁর বক্তব্য, “একজন এমবিবিএস ডাক্তার ভুল করলে কাউন্সিল আছে, হেলথ কমিশন আছে। কিন্তু গ্রামীণ চিকিৎসক ভুল করলে তাঁকে শাস্তি দেবে কীভাবে?” রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। লিভার ফাউন্ডেশনের এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রুরাল হেলথ মিশন’, ‘দি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকস নলেজ ফর চেঞ্জ প্রোগ্রাম’, ‘ব্রিস্টল-মায়ারস স্কুইব ফাউন্ডেশন’-এর অর্থ সাহায্য। ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর একটি জার্নালে এই সংক্রান্ত পেপার প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে গবেষক-লেখক হিসাবে ৪ জনের নাম রয়েছে। জিষ্ণু দাস, অভিজিৎ চৌধুরি, রেশমান হুসেন ও অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু বীরভূম নয়, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশেও চলছে ‘লিভার ফাউন্ডেশন’-এর এই প্রকল্প। গ্রামীণ চিকিৎসকদের সংগঠন অবশ্য অভিজিৎবাবুর নোবেল জয়ে খুশি। তাঁদের মত, “অভিজিৎবাবুর নোবেল জয় আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রকল্পকেই মান্যতা দিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.