Advertisement
Advertisement

Breaking News

ক্যানসার

ক্যানসার আক্রান্তদের পাশে কলেজ ছাত্রী, মাথা মুড়িয়ে চুল পাঠালেন মুম্বই

সোমাশার চুলহীন রূপ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল৷

Bengal college student's gesture towards cancer patients wins heart
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 6, 2019 5:50 pm
  • Updated:August 6, 2019 5:50 pm  

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: তিতিরের পথে সোমাশা৷ নিজের চুল কেটে ক্যানসার রোগীদের জন্য পাঠালেন নদিয়ার করিমপুরের বাসিন্দা সোমাশা মণ্ডল৷ সোমবার মুখ বন্ধ খামে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মু্ম্বইতে চুল পাঠালেন বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের এই ছাত্রী৷ আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই তা ভাইরাল নেটদুনিয়ায়৷

[ আরও পড়ুন: শুঁড় তুলে চালককে স্যালুট, সাইরেন বাজতেই ট্রেনলাইন ছাড়ল দাঁতাল]

করিমপুরের সোমাশা মণ্ডল ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজে ভূগোলের ছাত্রী৷ তাঁর কথায়, ‘মাস খানেক আগে রায়গঞ্জের তিতিরের চুলদানের বিষয়টি জানতে পারি। আমি মালদার এক দাদার মাধ্যমে ওর বাবা কৌশিক চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি মুম্বইয়ের যে সংস্থার চুল নেয়, তাদের ঠিকানা নিই। কিডনি, রক্ত, চোখ বা চুলও ক্যানসার আক্রান্তের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেমোথেরাপির পর চুল উঠে যায় সাধারণত৷ পরচুলা কিনতে সমস্যা হয়।’ একথা ভেবেই তিতিরের মতো সোমাশাও চুল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন৷

Advertisement

এক্ষেত্রে তিতির বা সোমাশারা যেভাবে এই রোগীদের যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, তা আলোচনারই বিষয়। ক্যানসার রোগীদের জন্য সোমাশার এই চুল কাটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। চর্চাও হচ্ছে সর্বত্র। এক্ষেত্রে কেউ কেউ টিপ্পনী কাটতেও ছাড়েনি। তাতে অবশ্য দমবার পাত্রী নয় সোমাশা। তিনি বলেন, ‘আমি আমার কাজ চালিয়ে যাব। কে কী বলল, আমি সেসব শুনতে চাই না।’ এর আগে ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য চুলদান করেছেন কয়েকজন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বোধহয় দ্বিতীয় শ্রেণির তিতির৷ মাস খানেক আগেই উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের ছোট্ট তিতির তার চুল কেটে পাঠিয়েছিল মুম্বইতে। ভাল নাম ঋষিকা চক্রবর্তী। তার কথা জানতে পেরেই উৎসাহী হয়ে ওঠেন সোমাশা৷ বলেন, ‘ক্লাস টুয়ে পড়ে ও যদি একাজ পারে, আমি কেন পারব না?’

সোমাশা শুক্রবার করিমপুরের বাড়ি থেকে ফিরেছেন কলকাতায়। শনিবার চুল কেটেছেন। কাটা চুলের দৈর্ঘ্য বারো ইঞ্চি না হলে ক্যানসার আক্রান্তদের কাজে লাগবে না। এমনকি মাটিতে পড়লেও তা নষ্ট হবে৷ তাই খুব যত্ন নিয়ে আদবকায়দার মাধ্যমে চুলটা কেটে সংগ্রহ করতে হয়। শনিবার তা করার পর সোমাশা তাঁর কাটা চুল ভাল করে একটি খামে ঢুকিয়ে রাখে। রবিবার পোস্ট অফিস বন্ধ থাকায় সোমবার বেলঘরিয়া থেকে মুম্বইয়ে পাঠিয়ে দেন এই কাটা চুল। তারপর সোমাশা ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন- ‘ছোট থেকেই আমার বাবা চুল কাটতে দিত না৷ উনিশ বছর বয়স হল, আমি মাত্র দু’বার নেড়া হয়েছি। যখন শুনলাম ক্যানসার আক্রান্তদের চুল দান করলে ওঁদের অনেক সাহায্য হবে, তখন আমারও ইচ্ছে হয় যে আমিও চুল দেব। কিছুদিন আগেই বাড়িতে গেছিলাম, তখন মা-বাবা দুজনকেই বলেছিলাম যে আমি আমার চুল ডোনেট করতে চাই ক্যানসার রোগীদের জন্য। বাবা একটু অবাক হয়ে গেছিল৷ তারপর বাবা বলে, কবে নেড়া করবি? আজকেই চল, নিয়ে যাব। বিশ্বাস করুন তখন আমি বল পাই৷ যে বাবা আমার চুল কাটা নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করত, সেই বাবা আমাকে নিজেই বলেছে, চুল কাটিয়ে দেবে! আমি আজকে ভীষণ খুশি। আর সবার কাছে একটাই অনুরোধ, যাদের চুল অনেক বড়, তারা প্লিজ বারো ইঞ্চি মতো চুল ক্যানসার আক্রান্তদের ডোনেট করুন।’

[ আরও পড়ুন:স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ, ছাত্রমৃত্যুতে ধুন্ধুমার আন্দুলে]

মেয়ের চুল কাটা নিয়ে মা সরস্বতী মণ্ডল এবং বাবা ভদ্রেশ্বর মণ্ডলকে প্রতিবেশীদের কাছে বেশ কিছু কথা শুনতেই হয়েছে। তবে সোমাশার সাফ কথা, ‘বাইরে যে আমাকে এত প্রশংসা করা হচ্ছে, মা-বাবা তা অত জানে না। ওরা বাইরে জগত দেখেও না। তাই গর্বিত হলেও কেউ কিছু বললে তাদের খারাপ লাগছে।’ সোমাশা খুব সাধারণ বাড়ির মেয়ে হলেও চোখেমুখে একরাশ স্বপ্ন। কবিতা লেখেন। বড় হয়ে চাকরি পেয়ে স্টেশনের শিশুদের বিনামূল্যে পড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। সোমাশার স্বপ্ন সত্যি হোক, এই শুভেচ্ছাই রইল৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement