চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: করোনার জেরে জলসার অনুষ্ঠান বন্ধ। এবার পুজোতেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন জলসার অনুষ্ঠানের শিল্পীরা। একইভাবে বিপাকে পড়েছেন জি বাংলার জনপ্রিয় শো ‘মীরাক্কেল’ খ্যাত স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান ও প্যারোডি গায়ক রাজু মিদ্দা। উৎসব-অনুষ্ঠানে অর্কেস্ট্রা কিংবা জলসার অনুষ্ঠানই তাঁর রুজিরুটি। অনুষ্ঠান বন্ধ, তাই আয়ও বন্ধ। লকডাউনের জেরে তাঁর মিউজিক ট্রুপের শিল্পীরা কেউ টোটো চালাচ্ছেন, আবার কেউ বা সবজি বিক্রি করছেন। কিন্তু গ্রামবাংলার মঞ্চ কাঁপানো এই রাজু মিদ্দা পড়েছেন বিপাকে। জেলার ‘সেলিব্রিটি’ হওয়ায় না পারছেন চালের জন্য লাইন দিতে, না পারছেন পেশা বদল করতে! অথচ জমানো পুঁজিও শেষ। এই পরিস্থিতিতে বাংলার জলসা শিল্পীদের দুরবস্থার কথা জানিয়ে রাজু দারস্থ হলেন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo) কাছে।
সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় নিজেও একজন বলিউড সংগীত শিল্পী। তিনি নিশ্চয়ই এই সমস্ত শিল্পীদের প্রকৃত দুর্দশার কথা বুঝতে পারবেন, সেই আশাতেই ভয়েস ম্যাসেজে তাঁরই গাওয়া গানের দু’কলি গেয়ে সাংসদের কাছে আবেদন জানালেন রাজু। একইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকেও আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।
‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার’ (Mirakkel Akkel Challenger) খ্যাত রাজু মিদ্দা বলতেই মনে পড়ে যায় নচিকেতা, কুমার শানু, কিশোর, রফি কন্ঠে প্যারোডি গান বা হরবোলার সুর। সাউথ ইন্ডিয়ান ভাষায় মহালয়া। উলটো শব্দে কিংবা কথায় রবি ঠাকুরে কবিতা আওড়ানো। মীর থেকে শ্রীলেখা মিত্র, রজতাভ দত্ত, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, নচিকেতার অত্যন্ত স্নেহের শিল্পী রাজু। এক সময় বাঁকুড়ার এই শিল্পী শুধু মাচার শো করে বেড়াতেন। মীরাক্কেলে যাওয়ার পর নামডাক হয়। তাঁর শিল্পস্বত্ত্বার গুণে বাজার দরও বাড়ে।
কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় আজও জলসার মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন তিনি। বিনোদ রাঠোর, অনুরাধা পাড়োয়াল, জিৎ, শ্রাবন্তী, রাঘব, অনুপমের সঙ্গে একই মঞ্চে অনুষ্ঠান করেছেন। সেই রাজু কোনওদিন ভাবতেই পারেননি এরকমও দিন দেখতে হবে তাঁকে।
এপ্রসঙ্গে রাজু মিদ্দা বলেন, “গত চার মাসে বহু প্রোগ্রাম বাতিল হয়ে গেল। আমাদের কোথাও আশা ছিল পুজোর সময় হয়তো সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো দেখছি অন্তহীন অপেক্ষা।” এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন যে, “অবশ্যই বিনোদনের আগে মানুষের প্রাণের দাম বেশি।” কিন্তু অন্য কোনও পেশা বা ব্যবসা থেমে নেই। শুধুমাত্র অনুষ্ঠান বা জলসা বন্ধ রয়েছে। রাজুর আক্ষেপ তিনি মধ্যবিত্ত সেলিব্রিটি। সেলিব্রিটি সুলভ আচরণ ধরে রাখতে গিয়ে পুঁজিও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রের প্রতিনিধি তথা সাংসদ বাবুলের ওপরেই ভরসা রাখছেন তিনি। কারণ বাবুলের প্রথম স্বত্ত্বা তিনি শিল্পী। আর শিল্পীর কোনও রং হয় না। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আবেদন জানাবেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.