সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: কেউ দিলেন দু’টাকা, কেউ পাঁচ, কেউ দশ। আবার পঞ্চাশ কিংবা একশো টাকাও রয়েছে ব্যক্তিগত দানের অঙ্কে। শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকার ৩০ জন ভিক্ষাজীবী সম্মিলিতভাবে করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিলেন চারশো টাকা। তাঁদের দানের অর্থ মাটির ভাঁড়ে সংগ্রহ করে শিলিগুড়ির মহকুমা শাসকের হাতে দিলেন ইউনিক ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। টাকার অঙ্ক ততটা বেশি না হলেও, সহৃদয়তায় এই মানুষগুলোই জিতে নিলেন শহরবাসীর মন।
শহরে ভিক্ষা করে দু’বেলা অন্ন সংস্থান করা মানুষগুলোর এমন কাজে আপ্লুত মহকুমা শাসক সুমন্ত সহায়ও। তিনি জানিয়ে দিলেন, এমন নিদর্শন তিনি তাঁর কর্মজীবনে অন্তত দেখেননি। শুধু দানের অর্থ তহবিলে জমা দেওয়াই নয়, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানাবেন বলে জানিয়েছেন মহকুমা শাসক। অন্যদিকে, এই উদ্যোগে শামিল হলেন যাঁরা, সেই সংগঠনের তাদের অন্যতম সদস্য শক্তি পাল বলছেন, “এমনিতে লকডাউনে এই সমস্ত ভিক্ষাজীবীদের গত দশদিন ধরে আয়-উপার্জনের রাস্তা সমস্ত বন্ধ। রাস্তায় লোকই নেই, ভিক্ষা দেবে কে? তাই বিভিন্ন সহৃদয় ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ বা খাবার জোগাড় করে তাঁদের দু’বেলা-দু’মুঠো সংস্থান করার চেষ্টা করছি আমরা। বুধবার দুপুরে খাবার দিতে আসার সময় তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে নিজেদের ইচ্ছের কথা জানান। তাই ক্ষুদ্র হলেও তাঁদের দানের ইচ্ছাকে অমর্যাদা করার সাহস পাইনি। সমস্ত সংগৃহীত অর্থ মহকুমা শাসকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
কখনও মন্দিরে, কখনও ফুটপাতে, কখনো ট্রাফিক সিগন্যাল সাধারণত তাঁদের ঠিকানা। কারও দৈনিক আয় মোটে পঞ্চাশ টাকা, কারও আবার একশো বা তার একটু বেশি। উৎসব-অনুষ্ঠানে আয় খানিকটা বেশি হয় কখনও-সখনও। তাও গত সাত দিন ধরে সেটাও বন্ধ। লকডাউনে এখন এক বেলার খাবার জোগাড় করাটাই তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জের। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিংবা দরদী কারও সহায়তায় সেই আহারটুকু হয়ত জুটে যাচ্ছে।
তবে তাতে বিশেষ পরোয়া করছেন না শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা ভিক্ষুকরা। বরং নিজেদের এতদিনকার আয় থেকে বাঁচিয়ে ৪০০ টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তাঁরা তুলে দিয়েছেন রাজ্যের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য। দাতাদের মধ্যে অন্যতম সুমিত্রা নামে এক মহিলার কথায়, “সবাই কিছু না কিছু সাহায্য করছে। মাইকেও প্রচার চলছে। তাই ভাবলাম, যা পারি তাইই দিই। অল্প টাকা তো, তাই কুন্ঠা বোধ করছিলাম।” টাকার অঙ্কে নিজেরা হয়ত কুণ্ঠা বোধ করছেন, কিন্তু তাঁদের যে কতখানি অকুণ্ঠ ভালবাসা রয়েছে, তা বোধহয় তাঁরা নিজেরাও জানেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.