বাবুল হক, মালদহ: বাবা সেই কবে তাকে আর তার পরিবারকে একলা করে দিয়ে চলে গিয়েছে। সংসার চালানোর ভার সেই থেকেই তার উপর। রাস্তায় বসে জুতো পালিশ করে সে। তারই ফাঁকে পড়াশোনা। যত কষ্টই হোক, শিক্ষা কিছুতেই বন্ধ করেনি। কারণ একটাই, বড় হয়ে শিক্ষক হতে হবে, এই স্বপ্ন ছোঁয়ার তাগিদ। সেই তাগিদেই মালদহের সঞ্জয় রবিদাস হাতে পেয়ে গেল উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary) চোখধাঁধানো এক মার্কশিট। ৯০ শতাংশ নম্বর পাওয়া সঞ্জয়ের এটাই এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় সম্বল।
সঞ্জয়ের যখন বয়স মাত্র ১ বছর, তখনই সে বাবাকে হারায়। মা আজও অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তিনিই কষ্ট করে ছেলেকে স্কুলের চৌকাঠে নিয়ে গিয়ে হাজির করিয়েছিলেন। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তরতরিয়ে এগিয়ে গিয়েছে সঞ্জয়। পঞ্চম শ্রেণি থেকে রাস্তার মোড়ে চটি সেলাই, জুতো পালিশ করে সংসারের হাল ধরেছিল কিশোর। এখনও সেই কাজ চলছে। দিনে আয় বলতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা মাত্র। পড়াশোনার খরচ চলে এটুকু দিয়েই। একা একা পড়াশোনা করে সে মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিল। আর উচ্চ মাধ্যমিকেও সঞ্জয়ের রেজাল্ট নজরকাড়া বললেও বোধহয় কম বলা হয়। ৯০ শতাংশ নম্বর!
চাঁচল ১ নং ব্লকের কনুয়া মধ্যপাড়ার রাস্তার মোড়ে জুতো সেলাই করা ছেলেটার মার্কশিটে চোখ রাখলে হয়ত লজ্জা পাবে যে কোনও ছাত্রছাত্রীই। বাংলায় ৮৬, ইংরেজিতে ৯৪, ভূগোলে ৯৩, দর্শনে ৮৭, রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ৭৬ এবং ইতিহাসে ৯১ পেয়েছে কনুয়া ভবানীপুর হাই স্কুলের এই ছাত্র। এই স্কুলের ছাত্রেরই রেজাল্ট খুব ভাল। তবে ‘স্টার’ কেবল সঞ্জয় রবিদাসই। সে দেখিয়ে দিল, বন্ধুদের কাছ থেকে বই চেয়ে, নোট সংগ্রহ করেও তাক লাগানো ফলাফল করা যায়।
লকডাউনের সময় জুতো সেলাইয়ের কাজ বন্ধ থাকায় খুব সমস্যায় পড়েছিল সঞ্জয় রবিদাস ও তার পরিবার। তখন তাকে আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সঞ্জয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন মালদহ জেলা পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম। কিন্তু তাতেও অনিশ্চয়তার মেঘ কাটেনি। ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েও কীভাবে স্বপ্ন পূরণ করবে, সেই চিন্তায় আকুল আঠেরোয় পা দেওয়া ছেলেটা। তার লক্ষ্য, কোনও একটা সরকারি চাকরি। তাহলে এতদিন মাথা নিচু করে জুতো সেলাই করার গ্লানি ঘুচবে। সমাজে মাথা তার উঁচু হবে। সঞ্জয়ের স্বপ্ন বাস্তবের মাটিতে পা রাখুক, আন্তরিক শুভেচ্ছা সকলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.