সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন, ইচ্ছে থাকলেই যে সব কিছু সম্ভব, তা প্রমাণ করে দিল বাপি ফকির। লক্ষ্য ঠিক থাকলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো যে অসম্ভবের কিছু নয়, সেটাই হাতেনাতে প্রমাণ করল এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মগরাহাটের বাপি ফকির। পা অসার। ভরসা বলতে দুটো হাতই। সেসব শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে সে।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মগরাহাট ডিহি কলসের শুঁড়িপুকুরের বাসিন্দা বাপি ফকির। আর্থিক দিয়ে তাঁর পরিবারও সেরকম স্বচ্ছল নয়! খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা-মা ও দুই ভাইবোনের পরিবার। জন্ম থেকেই পুরোপুরি শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার বাপি। তবু প্রতিবন্ধকতার কারণে হেরে মানেনি সে। বরং জীবনে এগিয়ে যেতে চেয়েছে সবসময়েই। নিজের অদম্য ইচ্ছা ও পরিবারের প্রিয়জনদের ভরসাতেই এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে বাপি। ডিহি কলসের হাইস্কুলের ছাত্র হিসাবে মায়ের কোলে চড়েই পরীক্ষা দিতে আসছে সে মগরাহাটেরই অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউশনের পরীক্ষাকেন্দ্রে।
মা সেরিনা বিবি জানান, নিজের হাত দুটোই কেবল ব্যবহার করতে পারে বাপি। তাও অনেক কষ্টে। রোগ সারাতে বহু হাসপাতালে ছোটাছুটি করেছেন তাঁরা। খরচও হয়েছে প্রচুর। পেশায় দর্জি ওর বাবা। আমাদের পক্ষে আর বেশি খরচ করা সম্ভব হয়নি। আর তাই নিজেই নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিয়েছে বাপি। দু’টি বেঞ্চের ওপর বামদিক চেপে শুয়ে শুয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ও।
পরীক্ষাকেন্দ্র অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুদ্দিন গায়েন জানান, ওই পরীক্ষার্থীর উপর বিশেষভাবে নজর রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তাকে অতিরিক্ত পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময়ও দেওয়া হচ্ছে প্রতিটি পরীক্ষায়। অন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে মাধ্যমিকই যখন জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা বাপির কাছে কিন্তু তা নয়। প্রতিটি দিনই লড়াই করে তাকে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে হয়। তবে মাধ্যমিকে বসতে পেরে বেজায় খুশি ও। পরীক্ষা কেমন হচ্ছে জানতে চাওয়ায় ঘাড় নেড়ে ভালই হচ্ছে বলে জানায় সে। তার এই কৃতিত্বে খুশি বাপির প্রতিবেশীরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.