ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-সব জায়গাতেই প্রথম সারির ছাত্রী হিসাবে উঠে আসত তাঁর নাম। ২০০৪ সালে বাবা মারা গেলেন। আর সেখান থেকেই জীবন বইতে শুরু করল উল্টো খাতে। একসময় যে দার্জিলিং গভর্নমেণ্ট কলেজের মেধাবী ছাত্রী বলে পরিচিত ছিল, হঠাৎই তার নামের সঙ্গে জুড়ে গেল ‘ফুটপাথের পাগলি’ তকমা। চেনা মুখগুলো তাঁকে দেখলে কেমন উপেক্ষার হাসি হাসত। বিদ্রুপ করত। তবে ভাগ্যের অসীম কৃপা। পাকদণ্ডী বেয়ে ফের সাফল্যের চূড়া খুঁজে পেয়েছে এই পাহাড়ি কন্যা। আঁধার থেকে আলোয় উত্তরণ হয়েছে তাঁর। এ গল্প সুজানা শর্মার। শৈলশহর দার্জিলিংয়ের মেয়ে।
১৯৯৫ সালে দার্জিলিংয়ের লোরেটো কলেজ থেকে আইসিএসই৷ দার্জিলিং গভর্নমেণ্ট কলেজ থেকে ২০০৩ সালে স্নাতক স্তরে প্রাণীবিদ্যায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম।পরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন সুজানা৷ মা সুশীলাদেবী মানসিক ভারসাম্যহীন৷ বাবা গণেশ শর্মা ছিলেন কৃষি দফতরের কর্মী। বাবা-ই ছিলেন মেয়ের জীবনে ‘আইকন’৷ ২০০৪ সালে বাবা মারা যাওয়ার পরই অসহায় হয়ে পড়েন পাহাড়ি কন্যা৷ মামা বাড়ির থেকে মায়ের দায়িত্ব নিলেও সুজানার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ৷ ফলে ঠাঁই হয় দার্জিলিংয়ের ফুটপাথে৷
ফাঁস স্বরা ভাস্কর অভিনীত ছবির যৌন দৃশ্য, ভাইরাল ভিডিও
খবর মিলতে প্রিয় ছাত্রীকে কাছে টেনে নিয়ে নিজের খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন লোরেটো স্কুলের শিক্ষক প্রকাশবাবু৷ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতেই আবার দুর্ঘটনা! রহস্যজনকভাবে বাড়িতেই অগ্নিদগ্ধ হন সুজানা৷ তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ খবর পেয়ে এবারও সুজানার পাশে দাঁড়ান শিক্ষক৷ নিয়ে যান কলকাতায়৷ সুজানা সুস্থ হলে ক্ষত ঢাকতে করা হয় প্লাস্টিক সার্জারি৷ কিন্তু সেবারও বাড়ির মেয়ের পাশে দাঁড়ায়নি পরিবার। এমন সময়ই কার্শিয়াং-এর একটি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরির সুযোগ আসে৷ সেখানেই মানুষ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে সুজানার৷ শুরু হয়েছে দার্জিলিং শহরে দখল হয়ে যাওয়া বাড়ি উদ্ধারের অন্য লড়াইও৷ শিক্ষক প্রকাশরত্ন তুলাধর বলেন, “একটি ভাল মেয়ে শেষ হয়ে যাবে তা মেনে নিতে পারিনি৷ তাই পাশে ছিলাম৷ সে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে৷ হাসতে শিখেছে। এটাই আমার পাওনা৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.