অর্ণব আইচ: যে কোনও সময়ে যে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে। তা মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে হবে প্রতিটি মুহূর্তে। সীমান্তে লাগাতার ভারত-পাক সংঘর্ষে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। দেশের প্রতিটি সেনা ঘাঁটি ও বায়ুসেনা ঘাঁটি শুধুমাত্র বার্তার অপেক্ষায়। এমতাবস্থায় বুধবার বর্ধমানের পানাগড়ের ফৌজি ঘাঁটিতে গিয়ে ‘ব্রহ্মাস্ত্র সেনা’কে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়ে এলেন ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের সেনা কমান্ডার।
পানাগড়ে বায়ুসেনা ঘাঁটির অদূরেই সেনা শিবির। সেই সেনা শিবিরে তৈরি হয়েছে পার্বত্য সেনা ‘ব্রহ্মাস্ত্র কর্পস’-এর ঘাঁটি। হিমালয়ের প্রত্যন্ত প্রান্তরে, সীমান্তে দাঁড়িয়ে শত্রুর মুখোমুখি হয়ে যুদ্ধে পারদর্শী এই বাহিনী। যেখানে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে দিন দুই আগেই বায়ুসেনা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে এবং যেখানে পাক বিমানকে গুলি করে নামিয়ে ফেলেছে ভারতীয় বাহিনী, সেখানে এদিন সেনা কমান্ডারের এই নির্দেশ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সেনা আধিকারিকরা।সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালেই ফোর্ট উইলিয়াম থেকে পানাগড় মিলিটারি স্টেশনে পৌঁছন ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি-ইন-সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম এম নারাভান। প্রথমেই তিনি ‘ব্রহ্মাস্ত্র কর্পস’-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি এন রাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই সেনা ঘাঁটির ব্রহ্মাস্ত্র সেনারা কীভাবে অপারেশনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন, তা তিনি নিজেই খতিয়ে দেখেন। একই সঙ্গে এই সেনাঘাঁটি যথেষ্ট নিরাপদ কি না, সেই বিষয়েও তিনি আলোচনা করেন অন্যান্য সেনাকর্তাদের সঙ্গে। এদিন ওই মিলিটারি স্টেশনের প্রত্যেকটি প্রান্ত তিনি নিজেই পরিদর্শন করেন।
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই এই সেনা ঘাঁটিতে রয়েছেন বড় সংখ্যার সেনা সদস্যরা। রাঁচিতে রয়েছে এই পার্বত্য সেনাবাহিনীর অন্য একটি ঘাঁটি। সেখান থেকে বাকি সেনাদেরও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানাগড়ে। কতদিনের মধ্যে রাঁচি থেকে পানাগড়ে ব্রহ্মাস্ত্র সেনারা আসবে, তা নিয়েও বৈঠক করেন সেনাকর্তারা। এদিন ব্রহ্মাস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেককে ইস্টার্ন কমান্ডের সেনা কমান্ডার নির্দেশ দেন, নিরাপত্তাজনিত যে কোনও চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেদের তৈরি রাখতে। জানা গিয়েছে, উপরমহল থেকে বার্তা এলে পানাগড় থেকে সেনাদের একটি অংশকে পাঠানো হতে পারে হিমালয়ের পার্বত্য সীমান্ত এলাকায়।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত চিনের সীমান্তে শত্রুদের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে এই সেনাবাহিনীকে। কিন্তু প্রয়োজনে পাকিস্তানের সীমান্তেও নিয়ে যাওয়া হতে পারে ব্রহ্মাস্ত্র বাহিনীকে। রুক্ষ পাহাড় থেকে শুরু করে ‘হাই অলটিচিউড’ বা উঁচু জায়গা, যে কোনও এলাকা থেকে সহজে শত্রুর মোকাবিলা করতে পারে এই বাহিনী। ইতিমধ্যে এই বাহিনীর জন্য বিশেষ অস্ত্রাগারও তৈরি হয়েছে। পর্বতে যুদ্ধের জন্য তাদের সেই অস্ত্র নিয়ে অনুশীলনও করতে হয়। এক সেনা কর্তা জানান, ব্রহ্মাস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত রাখতে প্রতিনিয়ত তাঁদের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলছে। এদিকে, পানাগড়ে এই সেনাঘাঁটির অদূরেই রয়েছে বায়ুসেনার ঘাঁটি। সেখানে ‘সুপার হারকিউলিস’-এর মাধ্যমে চলছে কমান্ডোদের মহড়া। বার্তা পেলে যাতে সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মাস্ত্র সেনাকে নিয়ে হারকিউলিস পার্বত্য সীমান্তের দিকে রওনা হতে পারে, সেই ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.