সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ঝাড়গ্রামে দাঁতালের হানায় এক মহিলা-সহ দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসল স্থানীয় প্রশাসন। হাতির হানা রুখতে গ্রামবাসীদের দাবিমতো রাতে গ্রামে আলোর ব্যবস্থা করল ব্লক প্রশাসন। একটি দাঁতাল হাতিই পরপর দুটি ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গিয়েছে বনদপ্তর সূত্রে।
সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে বেলিয়াবেড়া থানা এলাকায়। এনিয়ে চলতি বছর এখনও পর্যন্ত শুধু ঝাড়গ্রাম বিভাগেই হাতির হানায় মৃত্যু মোট পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে। যেভাবে দিনেদুপুরে জেলার বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় হাতি হামলা চালাচ্ছে, তাতে মৃত্যুর ঘটনা বা আহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক দানা বেঁধেছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। হাতির সামনে পড়লেই অবধারিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এখন দিনের বেলাতেও হাতি
লোকালয়ে ঢুকছে। রাজ্য সড়ক,জাতীয় সড়কে তাণ্ডব চালাচ্ছে।
সোমবার বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলিয়াবেড়া থানার আগরবানি গ্রামে ঢুকে পড়ে একটি দাঁতাল হাতি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই এলাকায় আগে কখনওই হাতির দেখা মেলেনি। তাই তাঁরা কিছুটা নিশ্চিন্তেই থাকেন। কিন্তু সোমবার আগরবনি গ্রামের মহিলা কল্যাণী ঘোষ ভোরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বেরিয়েছিলেন। সেই সময়ই তিনি একটি হাতির সামনে পড়ে যান। হাতিটি তাঁকে শুঁড়ে জড়িয়ে আছাড় মারে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এই ঘটনার পর স্থানীয় গ্রামবাসীরা হাতিটিকে এলাকাছাড়া করে।
আবার সোমবারই দুপুর তিনটে নাগাদ বেলিয়াবেড়া রাজবাড়ির কাছে এক ভবঘুরে বৃদ্ধকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মেড়ে পুকুরে ফেলে দেয়। বনদপ্তর সূত্রে খবর, মৃত বৃদ্ধের নাম অরবিন্দ দন্ডপাট, তাঁর বয়স ৭২ বছর। বনদপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন, আগরবনি গ্রামে মহিলাকে মারার পরে হাতিটিকে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ তাড়া করেছিল। আর সেই পথেই ওই বৃদ্ধকে সামনে পেয়ে যায় হাতিটি। বৃদ্ধ ওই মানুষটি রাজবাড়ির কাছে পুকুরের দিকে হেঁটে আসছিল বলে জানা গিয়েছে। তখনই হাতির সামনে পড়লে তাকে শুঁড়ে জড়িয়ে পুকুরে ছুড়ে ফেলে উন্মত্ত দাঁতাল।
এদিন আগরবানি গ্রামে হাতির হানায় মাহিলার মৃত্যুর খবর পেয়েই গ্রামে পৌঁছে যান গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের বিডিও জিশান খান। তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে সমস্যার কথা শোনেন। সরকারি প্রকল্প ‘সমব্যাথী’র সুবিধা যাতে তাঁরা দ্রুত পান, সেই আশ্বাস দেন বিডিও। এরপর গ্রামবাসীরা বিডিও’র কাছে দাবি করেন, গ্রামে রাতে যাতে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। গ্রামবাসীদের দাবিমতো, গ্রামে রাতে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই বিষয়ে গোপীবল্লভপুর দুই ব্লকের বিডিও জিশানখান বলেন, “গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন এর আগে এই রুটে কখনো হাতি ঢোকে নি। গ্রামবাসীরা রাতে গ্রামে আলোর কথা বলেছিলেন।আমরা গ্রামে রাতে আলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পরিবারটি যাতে সমব্যাথী-সহ সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা দ্রুত পান, তা দেখা হবে।” এমনিতেই দাঁতালটি ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে, ঘরবাড়ি নষ্ট করে, খেতের ফসল খেয়ে ত্রাস ছড়িয়েছে।ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্ছির কথায়, “হাতিটির উপর নজর রাখা হচ্ছে। প্রথম ঘটনার পর হাতিটিকে তাড়া করা হচ্ছিল। সেইসময় ওই ব্যক্তি সামনে পড়ে গেলে ঘটনা ঘটে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবে পরিবার দুটি।”
ছবি: প্রতীম মৈত্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.