নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: মহাভোজের অনুষ্ঠানে ঠাকুরবাড়ির দুই পরিবারের রাজনৈতিক লড়াই অব্যাহত রইল। ভোটের মুখে দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে দুই দলের দুই নেতার উপস্থিতিই ফের রাজনৈতিক কাজিয়া প্রকাশ্যে এল। শুক্রবারের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের মতোই ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর ও বউমা মমতাবালা ঠাকুর রবিবার মহাভোজের আয়োজন করলেন পৃথক দুটি জায়গায়। মমতা ঠাকুর মহাভোজের আয়োজন করেন ঠাকুরনগর মেলার মাঠে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সভার মাঠেই মহাভোজের আয়োজন ছিল শান্তনু ঠাকুরদের। পৃথক মহাভোজে দ্বিধাবিভক্ত মতুয়ারা৷ বিরক্ত হয়ে অনেক ভক্তরাই এলেন না ঠাকুরবাড়ি এলাকায়৷ এদিন শান্তনুদের অনুষ্ঠানে বড়মার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্যই এসেছি জানিয়ে স্বর্গীয় বীণাপাণি দেবীর উদ্দেশ্যে একটি গান করেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তাঁর আশীর্বাদ নিয়েছেন। এখানে রাজনীতি করতে আসিনি। অন্যদিকে, মমতাবালা শিবিরে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এদিন ছিলেন আক্রমণাত্মক। তিনি বলেন, “শুধু কৈলাস কেন, মানস সরোবর এসেও কিছু করতে পারবে না, কোনও লাভ হবে না। মতুয়া বাড়ির দখল নেবে ভক্তরা।” একদিকে শান্তনু ঠাকুরদের অনুষ্ঠানে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ বিজেপি নেতাদের উপস্থিতি, অন্যদিকে মমতাবালা ঠাকুরের মহাভোজে এদিন দুপুরে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতা নেত্রীদের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে থাকে ঠাকুরবাড়িতে।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বড়মার ছবিতে মালাদ্যান করে শ্রদ্ধা জানিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম একসঙ্গে অনুষ্ঠানটি হোক৷ ওদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ভক্তরা দেখছে সব। ঠাকুরবাড়ি মতুয়া সদস্যদের সম্পত্তি৷ কেউ যদি ভাবে ঠাকুরবাড়ির দখল নেবে, তা হবে না৷” ঠাকুরবাড়ি, বড়মা কারও একার নয় বলে তিনি জানান। অন্যদিকে, বড়মার ছবিতে মাল্যদান করে শান্তনু ঠাকুরদের অস্থায়ী মঞ্চে মতুয়া ভক্তদের মধ্যে বসে পড়েন কৈলাস৷ তার পাশে বসে থাকতে দেখা যায় বীণাপাণি দেবীর ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণকে। যদিও শান্তনু ঠাকুরকে কৈলাসবাবুর সঙ্গে দেখা যায়নি এদিন৷ আধ ঘন্টা বাদে তিনি আবার ফিরে যান৷ রবিবার মমতাবালা ঠাকুর মেলার মাঠের মহাভোজে ভক্তদের জন্য নিরামিষ খাবারের বন্দোবস্ত করেন। খেতে বসার ব্যবস্থা ছিল চেয়ার টেবিলে। দলে দলে এসে খেতে দেখা গিয়েছে মতুয়া ভক্তদের। পাশাপাশি কামনা সাগরের পাশের মাঠে নিচে বসে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন শান্তনু ঠাকুরেরা৷ মাছ খাওয়ানো হয় সেখানে। বহু ভক্তকে বসে খেতে দেখা যায়৷ বড়মার ঘরের সামনে নিশান হাতে ডঙ্কা বাজিয়ে নাচতে দেখা যায় মতুয়া ভক্তদের৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, প্রতিবেশি দেশে বাস করা হিন্দু, শিখ, ইহুদি, খ্রিস্টানরা যদি সেখান থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে এখানে আসেন তাহলে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সরকার লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনায় এনআরসি শক্তিশালী হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।”
[শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পর পৃথক মহাভোজ, ফের প্রকাশ্যে বড়মার পরিবারের তরজা]
তিনি অনুপ্রবেশকারীদের উদ্দেশে বলেন, “তারা এদেশের নাগরিক নয়, এখানে তাদের থাকার কোনও অধিকার নেই। এদেশের নাগরিকত্ব কেবল তাদেরই পাওয়া উচিত পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশে থেকে যাঁরা নিপীড়িত হয়ে আসেন। হিন্দু, শিখ, ইহুদি, খ্রিস্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন যারা৷” গতকালই পাঁচ হাজার মানুষকে এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করা কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানান তিনি। ৫ হাজার মানুষকে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র বক্তব্যের বিরোধিতা করে সাংসদ মমতা বলেন, “এমন ঘটনা আমাদের জানা নেই।” এদিন বিকেলে বড়মার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ঠাকুরবাড়িতে ঢুকতে বাধা পান সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিধায়ক দুলাল বর। তাকে দেখেই কয়েক জন ভক্ত প্রশ্ন করেন মৃত্যুর সময় আসেননি কেন? সামনে ভোট তাই রাজনীতি করতে এসেছেন? ক্ষোভের মুখে দ্রুত বেরিয়ে যান দুলালবাবু। যাবার সময় দুলাল বর জানিয়ে যান, তিনি একজন মতুয়া ভক্ত হিসেবে এসে ছিলেন। রাজনীতি করতে নয়। রাজ্যের দুই দলের নেতা, কর্মীদের উপস্থিতিতে সকাল থেকেই সরগরম ঠাকুরবাড়ি। তার মধ্যেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মতুয়ারা ভক্তরা এদিন এসেছেন ঠাকুরবাড়িতে। ভিড়ে ঠাসা ঠাকুরবাড়িতে বোঝাই যাচ্ছিল না কোন পক্ষে কারা। ঠাকুরবাড়ি এসে পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিক তরজায় বিরক্ত প্রকাশ করেছেন একাধিক মতুয়াভক্ত৷ কবে মিটবে ঠাকুরবাড়ির কাজিয়া, সেই প্রশ্ন নিয়েই বাড়ি ফিরছেন তাঁরা।
[বড়মার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও অব্যাহত পারিবারিক তরজা, ঠাকুরবাড়িতে আলাদা আয়োজন]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.