ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: চারিদিকে যখন হিংসার আগুন জ্বলছে, তখনই সম্প্রীতির বার্তা দিলেন বসিরহাটের গোয়ালপোতার বাসিন্দারা। মঙ্গলবার রাত থেকে যখন ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বসিরহাট, তখনই অপর পাড়ার বাসিন্দাদের আশ্রয় দিয়ে সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করলেন তাঁরা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে যখন মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ছে, গুলি চলছে, আগুন লাগানো হচ্ছে একের পর এক বাড়িতে তখনই পশ্চিম দিণ্ডরহাটের পারুইপাড়ার বাসিন্দাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় গোয়ালপোতার কয়েক ঘর হিন্দু-মুসলিম পরিবার। রাতের অন্ধকারেই আতঙ্কগ্রস্ত মানুষদের রাতে থাকার আশ্রয় দেন তাঁরা। একই সঙ্গে করেন খাওয়ার ব্যবস্থা।
গোয়ালপোতার বাসিন্দাদের এই সম্প্রীতির বার্তাতেই মুগ্ধ গোটা দণ্ডিরহাট এলাকা। মুখে মুখে ছডি়য়েছে এই ঘটনার কথা। বুধবার সকালে দণ্ডিরহাটের অশীতিপর রামকৃষ্ণ হালদার জানিয়েছেন, “অশান্তির আগুন যতই থাক এই শান্তির বার্তাই ছড়িয়ে পড়ুক দিকে দিকে। এটাই আমাদের রসদ। এটাই আমাদের সংস্কৃতি।” গোয়ালপোতার বাসিন্দারা আতঙ্কগ্রস্তদের জন্য খুলে দিয়েছে স্থানীয় একটি ক্লাব ঘর ও গোয়ালপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেই আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১০০জন। যাঁদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ২০টি শিশু ও দু’জন অন্তঃসত্ত্বা। প্রত্যেকের জন্য আহার, শিশুদের দুধ জোগাড়ের চেষ্টা করছেন গোয়ালপোতার শেখ সামসুর, গণেশ মণ্ডলরা।
মঙ্গলবার রাতে যখন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটি গোষ্ঠীর লোক, তখন কোনওক্রমে ঘর থেকে প্রাণ হাতে করে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে আসেন এই ১০০ জন। একটি জলাশয় পাড় করে বিপরীত দিকের গোয়ালপোতায় এসে হাজির হন। সেখানেও যে তাঁরা আশ্রয় পাবেন তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু তাঁদের অবাক করে প্রত্যেককে আপন করে নেন সালমা বিবি ও সীমা দাসরা। আতঙ্কগ্রস্ত গৃহবধূ পায়েল ঘোষ জানিয়েছেন, “প্রাণে বাঁচব কি না তাই ভাবছিলাম।কিন্তু যেভাবে গোয়ালপোতা আমাদের আশ্রয় দিল, এই ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়।” যদিও এই আশ্রয় দেওয়াকে বড় করে দেখতে নারাজ সালমা বিবিরা। তাঁর মতে, “বসিরহাটে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। আমরা সবাই একসঙ্গে ঘুরতে ভালবাসি। একসঙ্গে উৎসব উদযাপন করি। তাহলে এই আশ্রয় দেওয়াকে কেন বড় করে দেখব। আমাদের বিপদে ওরাও পাশে থাকে। তাহলে আজ আমরা নই কেন।”
এদিকে গোয়ালপোতায় যাতে কোনও গোষ্ঠী অশান্তি ছড়াতে না পারে তার জন্য এক হয়েছেন সামসুর, গণেশ মণ্ডলরা। তারা জানিয়েছেন, দিন ও রাত দু’ভাগে পাড়া পাহারা দেওয়া হচ্ছে পালা করে। বাইরে থেকে এখানে এসে কাউকে গোলমাল পাকাতে দেব না। আমরা এক ছিলাম একই আছি। বসিরহাটও এক থাক এটাই চাই আমরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.