বাবুল হক, মালদহ: বরকত সাহেব বেঁচে থাকলে সিপিএমের সঙ্গে ডালুর হাত ধরাধরি দেখে আত্মহত্যা করতেন। মালদহে নির্বাচনী প্রচারে এসে গনির সাংসদ ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরিকে এভাবেই বিঁধলেন তৃণমূলের রাজ্যস্তরের অন্যতম শীর্ষনেতা ফিরহাদ হাকিম।
শনিবার বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মালদহ দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের সমর্থনে কালিয়াচকের যদুপুর হাসপাতাল মাঠে নির্বাচনী জনসভা করেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আর সেখানেই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার ঝড় তুলে দেন তিনি। প্রয়াত বরকত গনি খান চৌধুরির নাম ভাঙিয়ে ভোট চাওয়ায় মালদহ দক্ষিণের বিদায়ী কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরির (ডালু) তীব্র সমালোচনা করেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, “সিপিএমকে বাংলা থেকে উৎখাত করে বরকত সাহেবের স্বপ্ন পূরণ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বরকতদার স্বপ্ন ছিল, সিপিএমকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। সেই কাজটা কংগ্রেস করতে পারেনি। সিপিএমকে বাংলা থেকে উৎখাত করে বরকতদার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।” এখানেই থেমে থাকেননি মন্ত্রী ফিরহাদ। বিদায়ী সাংসদ তথা গনির ভাই ডালুবাবুকে কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কেন এখন সিপিএমের হাত ধরলেন ডালু? বরকতদা যে সিপিএমকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন, ডালুবাবু এখন সেই সিপিএমের সঙ্গে জোট করেছেন। সিপিএম এখানে তাই প্রার্থী দেয়নি। সিপিএমের সঙ্গে ডালুবাবুর এই সখ্যতা সহ্য করতে পারতেন না বরকতদা। বেঁচে থাকলে এটা দেখে তিনি আত্মহত্যা করে ফেলতেন। তাঁর পরিবারের কেউ সিপিএমের সঙ্গে মাখামাখি করবে, এই লজ্জা সহ্য করতে পারতেন না গনি খান সাহেব।”
মালদহের কালিয়াচকের যদুপুরের জনসভায় তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের সমর্থনে ভোট প্রার্থনা করে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এই এলাকাটা বরকতদার। আমরা তাঁর আদর্শেই চলি। আমরা যাঁরা এখন তৃণমূল কংগ্রেস করছি একটা সময় আমরা সকলেই কংগ্রেস করতাম। এবং আমি নিজে বরকতদার সঙ্গে কাজ করতাম। ছোট ছিলাম। বরকতদা আমাকে ভালবাসতেন। তখন আমরা ডালুদাকে দেখিনি যে তিনি কংগ্রেস করতেন। বরকতদার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেও দেখিনি ডালুকে। বরকতদার সঙ্গে তিনি থাকতেন, সেটাও দেখিনি। মালদহের মানুষ বরকতদার ঋণ শোধ করার জন্য দুই হাত তুলে ভোট দিয়ে ডালুবাবুকে আশীর্বাদ করলেন। কিন্তু মালদহের মানুষ তার বিনিময়ে ডালুবাবুর কাছ থেকে পেলেনটা কী? যে এমপিকে তিনবার ভোট দিলেন মালদহের মানুষ, কিন্তু সেই এমপি পার্লামেন্টে গিয়ে মালদহের মানুষের স্বার্থে একটা বাক্যও খরচ করলেন না। কালিয়াচকের আফরাজুল খুন হলেন রাজস্থানে। পার্লামেন্টে একটা কথাও বললেন না ডালু। মানিকচকের নয় জন শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে বিস্ফোরণে প্রাণ হারালেন। অথচ সাংসদ ডালুবাবু পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে একটা প্রতিবাদও করেননি। তাঁকে এমপি করে কী লাভ? এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে, দেশরক্ষার স্বার্থে, মমতার হাত শক্ত করতে আপনারা এবার ডালুকে ছুঁড়ে ফেলুন। মোয়াজ্জেম হোসেনকে সমর্থন করুন। আপনাদের ভাই হিসাবে এই আবেদন রাখছি।”
কালিয়াচকের এই নির্বাচনী জনসভায় প্রার্থী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আতিউর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য আরেফুর রহমান, সুজাপুরের নেতা হামিদুর রহমান ও অন্যরা। এদিনই ওল্ড মালদহের নিমাইসরাই ও সন্ধ্যায় ইংলিশবাজার শহরের মিরচকে নির্বাচনী জনসভা করেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। প্রত্যেকটি সভায় সাধারণ মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। মালদহে মন্ত্রী ফিরহাদ বলেন, “মুর্শিদাবাদে আরএসপির হাত ধরেছে অধীর চৌধুরি। আর মালদহে সিপিএমের হাত ধরেছেন ডালুবাবু। আসলে কংগ্রেসের শিরদাঁড়া নেই। আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে কংগ্রেস। কোনও দিন শুনবেন, কংগ্রেস জেতার জন্য বিজেপিকে নিয়ে চলছে। গরুর থেকে মানুষের দাম কমে গিয়েছে। এনআরসি নিয়ে দেশজুড়ে বিজেপি যা বলছে তাতে একটি সম্প্রদায়ের মানুষকে বাংলাদেশ তাড়াবার পরিকল্পনা করছে। এসব নিয়েও দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ হিসেবে কোনও দিনই পার্লামেন্টে বক্তব্য পেশ করেননি ডালুবাবু। আজ পর্যন্ত বিজেপির বিরুদ্ধে কিছু বলেননি তিনি। তাঁকে আর ভোট নয়। আপনারা এবার তৃণমূলের পাশে দাঁড়ান। এটাই আমার আবেদন।”
ছবি: হরেন চৌধুরি
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.