ছবিতে পোষা বাঁদরকে নিয়ে থানায় মালিক, ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: হাত দেখতে গিয়ে গৃহবধূকে খামচে দিল বাঁদর। এই অপরাধে বাঁদর ও তার মালিককে আটকে রেখে থানায় নালিশ করল আক্রান্ত গৃহবধূর পরিবার। খামচে দেওয়ার অপরাধে বাঁদরের আটক হওয়ার ঘটনা দুর্লভ। যদিও তেমনটাই ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের ঝর্ণাগ্রামে। পুলিশ বাঁদর-সহ মালিককে আটক করলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়। তবে বাঁদর কিন্তু মালিকের কাছে নয়, গিয়েছে বনদপ্তরের জিম্মায়।
এই ঘটনায় ঝর্ণাগ্রামের মানুষ স্বস্তির শ্বাস ফেললেও বাঁদরের মালিকের দুঃখের সীমা নেই। তাতো হবেই, টানা তিনবছর ধরে বুড়ো যে শাহিন শেখের কাছেই রয়েছে। আরে বিরক্ত হবেন না, আদর করে পোষা বাঁদরকে ‘বুড়ো’ নামেই ডেকে থাকেন তার মালিক শাহিন শেখ। বুড়োকে নিয়ে এদিকওদিক খেলা দেখিয়েই উপার্জন করেন তিনি। কখনও নিজের গ্রাম তো কখনও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। নদিয়ার মহতপুরের বাসিন্দা শাহিন ভেবেছিলেন সামনেই পুজোর মরশুম, মানুষ বেশ খুশিতেই আছে। তাই একটু পাশের জেলাতে বুড়োকে নিয়ে খেলা দেখিয়ে এলে রোজগারপাতিও ভাল হবে। যেমনটি ভাবা তেমনই কাজ, রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ বুড়োকে নিয়ে মালিক চলে এলেন ভাতারের ঝর্ণাগ্রামে। শাহিন শেখের কাঁধে বাঁদর দেখতে পেয়ে ততক্ষণে ভিড় জমেছে পাড়ায়। মাদারির খেল দেখতে কচিকাঁচাদের সঙ্গে বাড়ির বউরাও চলে এসেছেন। বুড়ো ঘুরে ঘুরে খেলা দেখাচ্ছে। দর্শকদের হাততালিতে মুখর গোটা পাড়া। দর্শক সমাগম দেখে সাইড বিজনেসও শুরু করে দিয়েছেন বাঁদরের মালিক। অসুখ সারাতে টোটকা হিসেবে তাবিজ কবচ দেন শাহিন শেখ। সুযোগ বুঝে ভিড়ের মধ্যে সেই প্রচারও সেরে ফেলেন। বাঁদরের খেলায় মুগ্ধ বাসিন্দাদের অনেকেই তাবিজ নিতে মনস্থ করে ফেলেছে। এরপর খেলা শেষে এলাকার বাসিন্দা প্রশান্ত ঘোষের বাড়িতে বাঁদর নিয়ে ঢুকে পড়েন শাহিন শেখ। তারপর হাত দেখার কথা বলেন। প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘ওই ব্যক্তি তাঁর বাঁদরের উদ্দেশ্যে বলেন, বুড়ো, কাকিমার হাতটা একবার দেখে দাও। তারপর বাঁদরটির দিকে এগিয়ে দিতেই আমার স্ত্রীর হাতে সজোরে আঁচড়ে দেয় বুড়ো। রীতিমতো পাগলামো করতে থাকে। আমরা ভয়ে পালিয়ে যাই।’
এদিকে বাঁদরের আঁচড়ে প্রশান্তবাবুর স্ত্রী শিপ্রাদেবীর হাত থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে। এই দেখেই উপস্থিত জনতার মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। তড়িঘড়ি আহত শিপ্রাদেবীকে গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে উত্তেজিত বাসিন্দারা বাঁদর-সহ মালিককে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ওড়গ্রাম ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। শাহিন শেখ ও তাঁর বাঁদর বুড়োকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের পর শাহিন শেখকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তাঁর সাধের বুড়োকে বনদপ্তরের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। আদরের বুড়োকে হারিয়ে মনের দু:খে একাই বাড়ি পথ ধরেন শাহিন শেখ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.