সৌরভ মাজি, বর্ধমান: জমির শ্যাওলা ধানের পুষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটায়। আবার বাতাসে অতিরিক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে পরিবেশেরও ক্ষতি করে। ধান জমি থেকে শ্যাওলা তুলে খুব কম খরচে কাগজে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। মিলেছে সাফল্যও। ইতিমধ্যেই শ্যাওলা থেকে কাগজ তৈরির বিষয়ে আর্থিক অনুদানের আবেদন করা হয়েছে। এখন তা পাওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের মহিলা গবেষক পিয়ালী মুখোপাধ্যায় কয়েকবছর আগে অধ্যাপক জয়প্রকাশ কেশরীর অধীনে পিএইচডি শুরু করেন। তাঁর এই প্রকল্পের বিষয় ছিল শ্যাওলা থেকে কাগজ তৈরি। জয়প্রকাশবাবু জানান, ধানজমিতে প্রচুর পরিমাণ শ্যাওলা জন্মায়। সেই শ্যাওলা জমি থেকে তুলে শুকনো করা হয়। তারপর তার সঙ্গে ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়ো প্রভৃতি মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। এই মণ্ড যন্ত্রের মাধ্যমে কাগজে রূপান্তরিত হয়। জমি থেকে শ্যাওলা তোলার পর প্রক্রিয়াকরণ করে কাগজ তৈরি করতে সময় লাগে সাত থেকে আটদিন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতে কাগজ তৈরিতে খরচ খুব একটা বেশি নয়। যন্ত্রটির দাম ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে। খুব কম খরচে এই পদ্ধতিতে কাগজ থেকে কভার ফাইল, ডায়েরি প্রভৃতি তৈরি করা সম্ভব। আর এই কাজ করে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষেরা রোজগারও করতে পারবেন। পিয়ালীদেবী জানান, ইতিমধ্যে তাঁরা কয়েক জায়গায় ওয়ার্কশপ করেছেন। সেখানে বিডিও, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দপ্তর, সেলফ হেল্প গ্রুপের মহিলা সদস্যরাও ছিলেন। তাঁদের হাতেকলমে এইভাবে কাগজ তৈরি শেখানোও হয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি পুরসভার সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে তাঁদের। জানা গিয়েছে, হুগলির বৈদ্যবাটি ও শেওড়াফুলি পুরসভায় কর্মশালা করাবেন তাঁরা।
পিয়ালীদেবীর কথায়, “বিজ্ঞানকে সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করতেই এই প্রকল্প।” তিনি জানান, এই প্রকল্পে ব্যবহৃত শ্যাওলা জমিতে ধানের পুষ্টি নষ্ট করে। জমিতে দেওয়া সার-সহ অন্যান্য উপাদান তারা পেয়ে শ্রীবৃদ্ধি ঘটায়। ধানের পুষ্টিতে ক্ষতি হয়। আবার কৃষকদের ওই শ্যাওলা তুলে ফেলতে হলেও প্রচুর খরচ। তাই এই পদ্ধতি সব দিক থেকেই লাভজনক বলে মনে করছেন পিয়ালীদেবী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.