ধীমান রায় ও অভিষেক চৌধুরী, বর্ধমান: বর্ষার জলে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ভাগীরথী নদী (Bhagirathi River)। আর তার জেরেই কার্যত বিছিন্ন হয়ে পড়েছেন কেতুগ্রামের নতুনগ্রামের বাসিন্দারা। ভাগীরথী ও বাবলা নদীর মাঝের রাস্তা ছিল গ্রামবাসীদের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। যা জলের তোড়ে সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দিন আগে থেকে একটু-একটু করে ভাঙছিল নতুনগ্রামের উত্তরদিকে অবস্থিত দুই নদীর মাঝে এই রাস্তাটি। শনিবার ভোরে রাস্তার বড় অংশ ভেঙে গিয়ে ভাগীরথী ও বাবলা নদী এক হয়ে গিয়েছে। কেতুগ্রাম ২ ব্লকের মউগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পিপাসা মালিক বলেন, “বর্তমানে নতুনগ্রামবাসীর যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। রাস্তা ভেঙে গিয়ে জলবন্দি অবস্থা। সমগ্র পরিস্থিতির কথা প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে। আমরা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সবসময় পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।”
উল্লেখ্য, মউগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নতুনগ্রামে প্রায় ৩২০০ মানুষের বসবাস। ২২০০ ভোটার রয়েছেন। ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী এই গ্রামের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী নদী। পশ্চিম দিকে বাবলা নদী। আর উত্তর অংশে যে রাস্তাটি ছিল তা কার্যত দুই নদীর মাঝামাঝি একটি বাঁধ। স্থানীয় বাসিন্দা লাল্টু প্রধান বলেন, “দুই নদীর মাঝামাঝি এই বাঁধের রাস্তা দিয়ে গ্রামের সকলে মুর্শিদাবাদ জেলা এলাকায় হাটবাজারে যাতায়াত করে থাকেন। এটিই ছিল একমাত্র স্থলপথ। না হলে গ্রামের সকলকে জলপথে যাতায়াত করতে হয়। এখন রাস্তা ভেঙে নতুনগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গিয়েছে।”
গ্রামবাসীরা জানান, গতবছর প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা খরচ করে দুই নদীর মাঝে বাঁধের কাজ করেছিল সেচ দপ্তর। কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই তা ভেঙে গিয়েছে। এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেই জানান কাটোয়ার মহকুমাশাসক প্রশান্ত রাজ শুক্লা। তিনি বলেন, “বিডিওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জরুরিকালীন তৎপরতায় ওই নদীবাঁধের রাস্তা মেরামত করে দিতে। বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের দলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন থেকে সবরকম সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।”
এদিকে ভাগীরথীর জলস্তর বাড়ার ফলে পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে শনিবার বিকালে নসরতপুর এলাকার নদীপাড়ের বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে ভাঙন সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন তিনি। সারাবছর ধরেই নদী পাড়ে অল্পস্বল্প ভাঙন লেগেই থাকে বলে দাবি এলাকার বাসিন্দাদের। বর্ষাকাল এলেই তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। একটানা তিন-চারদিনের এই বৃষ্টির ফলে জালুইডাঙ্গা শ্মশানঘাট এলাকার নদীপাড়ের ভাঙন নতুন করে শুরু হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা তথা নসরতপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আনারুল মণ্ডল।
শ্মশানঘাটে যাওয়ার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে যে ঢালাই রাস্তা করা হয়েছিল সেই রাস্তার বেশিরভাগ অংশটাই নদীর জলে তলিয়ে গেছে। ভাঙনের এলাকা থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেললাইন। আর এই রেললাইন দিয়েই কামরূপ, তিস্তার মতো এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াত করে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে রেললাইন পর্যন্ত ভাঙনের গ্রাসে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। রেলদপ্তরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন স্বপন দেবনাথ।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.