Advertisement
Advertisement
Barasat

টোটো চালিয়ে সংসার চালান, নারী ক্ষমতায়নের মুখ ‘দশভুজা’ কাজল

আদিবাসী তরুণীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলছেন বছর চব্বিশের কাজল।

Barasat woman drives toto for livelihood, performs as Durga | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:September 25, 2023 2:22 pm
  • Updated:September 25, 2023 6:27 pm  

অর্ণব দাস, বারাসত: আক্ষরিক অর্থেই দশভুজা তিনি। দু’চোখে সংসার করার রঙিন স্বপ্ন নিয়ে প্রেমিকের হাত ধরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। কিন্তু, বিধির বিধান ছিল অন‌্যরকম। পুত্রসন্তানের জন্মের পরই বদলে যায় পরিস্থিতি। নিত‌্য নেশাভাঙ করে স্ত্রীর উপর অত‌্যাচার চালাত গুণধর স্বামী। চোখের সামনে পরিচিত মানুষকে এভাবে পালটে যেতে দেখেও হাল ছাড়েননি বারাসতের পূর্বাচলের বাসিন্দা কাজল লোহার।

কোলের ছেলেকে নিয়ে মধ‌্যমগ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসেন বাপের বাড়িতে। সেই শুরু লড়াইয়ের। পেটের তাগিদে পেশা হিসাবে টোটো চালানোকে বেছে নিয়েছেন এই আদিবাসী তরুণী। সেইসঙ্গে নিজের সম্প্রদায়ের স্থানীয় মেয়েদের নিয়ে খুলে ফেলেছেন আস্ত একটি নাচের দলও। যাঁরা পুজোর সময় মহিষাসুরমর্দিনী মঞ্চস্থ করে ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছেন নারীশক্তির লড়াইয়ের পরিচিত মুখ। নতুন করে নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এভাবেই এলাকার আদিবাসী তরুণীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলছেন বছর চব্বিশের কাজল।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘নওশাদ শুধু জঙ্গি নয়, ওদের নায়ক’, বিস্ফোরক শওকত মোল্লা, পালটা জবাব ISF বিধায়কের]

ছেলের মুখের দিকে চেয়ে তাঁকে যে সংসারে টিকে থাকতে অসম লড়াই লড়তে হয়েছে, সেই স্মৃতিচারণ করে কাজল জানালেন, বছর আটেক আগে ভালবেসে বিয়ে করেন মধ‌্যমগ্রামের প্রেমিককে। কিন্তু, ছেলে হওয়ার ছ’মাস পর থেকে স্বামী প্রতিদিন নেশা করে বাড়িতে এসে তাঁর উপর অত্যাচার চালাত। অত্যাচার আরও বাড়লে ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন কাজল। বাপের বাড়ি ফিরে অর্থ উপার্জন করতে প্রথমে পরিচিতদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নেন। ছেলের যখন দু’বছর বয়স, তখন ঋণ নিয়ে একটি টোটো কেনেন। ছেলের পড়াশোনা এবং সংসার চালাতে বিগত ছ’বছর ধরে তিনি বারাসত শহরের আনাচে কানাচে টোটো চালাচ্ছেন। এখন শহরের অনেক যাত্রীই কাজলের টোটোতে চাপার অপেক্ষায় থাকেন।

সংসার চালাতে টোটো চালালেও ভোলেননি নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে। প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী কাজল কমবেশি পনেরোটি বাচ্চাকে নাচ শেখান। তিনি নিজে আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাই নিজের সম্প্রদায়ের মেয়েদের মধ্যে নৃত্যশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে একটি নাচের দলও করেছেন। সেই দলে দুর্গা রূপে মঞ্চে মহিষাসুরকে বধ করতে দেখা যায় তাঁকে। এবছরের দুর্গাপুজোয় বারাসতের একাধিক মণ্ডপের মঞ্চে তাঁকে ফের দেখা যাবে দুর্গা রূপে। পাশাপাশি ভাল ছবিও আঁকেন তিনি। নিজের হাতে আঁকা সেই ছবি অনেককে উপহারও দেন। কাজলের মতো জীবন্ত দশভুজা নিঃসন্দেহে আজ অন্যান্য নারীদের কাছে দৃষ্টান্ত। নিজের আয়ে, নিজের পরিচয়ে মাথা উঁচু করে চলার আনন্দই যে আলাদা, সেকথা অকপটে স্বীকার করে নিয়ে কাজল জানালেন, “কোনও পেশাই ছোট নয়। ছেলের দু’বছরের জন্মদিনে ঋণ নিয়ে টোটো কিনেছিলাম। টোটো চালিয়ে সেই ঋণের টাকা শোধ করেছি। প্রতিবেশী মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহিত করি।”

 

[আরও পড়ুন: ‘স্পেনে যেতে পারেন কিন্তু মানুষের Pain বোঝেন না’, মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফরকে খোঁচা অধীরের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement