ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: ক্লাসরুম থেকে বেঞ্চ, সব কিছুরই জরাজীর্ণ অবস্থা। কোথাও দেওয়াল থেকে প্লাস্টার খসে পড়েছে। কোথাও গোটা দেওয়ালটিই ভেঙে পড়ার মতো দশায়। শৌচালয়গুলিও ব্যবহারযোগ্য নয়। জলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পড়ুয়াদের এই দুর্দশা দেখে স্কুলটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেন এক ব্যক্তি। কিন্তু ওই স্কুলের সঙ্গে তাঁর সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই৷
সম্পর্ক এটাই, তাঁর দিদি এক সময় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। সেই টান থেকেই কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে গোটা স্কুলটির সংস্কার করে নজির গড়লেন তিনি। শুক্রবার বারাসতের মহাত্মা গান্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়(২)-এর নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করলেন সেই প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা বিজয়া বিশ্বাস। নাচ-গানের মাধ্যমে তাঁকে ধন্যবাদ জানাল স্কুলের শতাধিক পড়ুয়া।
[পঞ্চায়েত ভোটের গুঁতোয় পুরুলিয়ায় রক্ষীবিহীন মন্ত্রী, জেলাশাসকরা]
বারাসতের প্রথম প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত এই স্কুলটি। ১৯৭৭ সালে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে দায়িত্ব নেন বিজয়াদেবী। সতেরো বছর আগে প্রধান শিক্ষিকা পদ থেকেই অবসর নেন তিনি। তবে স্কুলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতেন তিনি। স্কুলের জরাজীর্ণ অবস্থা উন্নতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু সরকারি খাতে টাকা না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। চলতি বছর মার্চ একটি শংসাপত্র নিতে ওই স্কুলে এসেছিলেন বিজয়াদেবীর ভাই অমিতাভ গুহ। স্কুলের এই দুর্দশা নাড়া দেয় তাঁকে৷ জানতে পারেন অর্থের অভাবেই এই অবস্থা। তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্কুলটি সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি দিদির থেকে গোপন রেখেছিলেন। অমিতাভবাবুর আর্থিক অনুদানে গত দু’মাস ধরে স্কুলটি সংস্কারের কাজ চলে। অবশেষে বিষয়টি বিজয়াদেবী জানান অমিতাভবাবু। স্কুলের সেই নতুন রূপ দেখার জন্য অপেক্ষা করতে পারেননি বিজয়াদেবী। অসুস্থতা নিয়েও ছুটে আসেন স্কুলে।
এদিন স্কুলের নবনির্মিত ভবনটি উদ্বোধন করেন তিনি। অবেগতাড়িত বিজয়াদেবী বলেন, “কম ঝড়-জল যায়নি। প্রথমে স্কুলটি একটি ভাড়া বাড়িতে চলত। বাড়ির মালিক ভাড়া তুলে দেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই জমিটিতে স্কুলটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। অর্থাভাবে স্কুলটির বেহাল দশা হয়েছিল।” স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুমনা দে মিত্রের মন্তব্য, “অমিতাভবাবু ও বিজয়াদেবীর কাছে স্কুলের পড়ুয়ারা চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।” অমিতাভবাবু বলেন, “এই স্কুলটির সঙ্গে আমার দিদির আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই এর বেহাল দশা দেখে ঠিক থাকতে পারিনি। যেটুকু পেরেছি করেছি।”
এদিন এই স্কুলের পড়ুয়াদের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো ছিল৷ স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, রঙিন জামাকাপড় পরে ইতিউতি ছুটে বেড়াচ্ছে একঝাক কচিকাঁচা। ক্লাস ওয়ানের এক ছাত্রকে প্রশ্ন করা হয়, আজ কীসের আনন্দ? উত্তরে সে বলে, “আজ আমাদের স্কুলের জন্মদিন।” ঠিকই তো, এদিন যেন নতুন জন্ম হল মহাত্মা গান্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের৷
[ট্যাংরার জনবহুল রাস্তায় প্রোমোটারকে কুপিয়ে খুন, পলাতক ৪ অভিযুক্ত]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.