Advertisement
Advertisement

Breaking News

ভাইফোঁটার আগে পথভোলা বোনকে বাড়ি ফেরাল হাসপাতাল

চোখে জল পরিজনদের৷

Barasat hospital reunites girl with family
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:November 3, 2018 11:28 am
  • Updated:November 3, 2018 11:28 am  

ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেনে উঠে অচেনা জায়গায় চলে এসেছিলেন এক মহিলা। দীর্ঘদিন অবসাদে ভোগার কারণে, মানসিক রোগ বাসা বেঁধেছিল মস্তিষ্কে। স্মৃতির পাতা থেকে মুছে গিয়েছিল বাড়ির ঠিকানা, পরিচয়, এমনকী নিজের নামও। ঠাঁই হয় বারাসত হাসপাতালে। প্রায় তিন মাস চিকিৎসার পর স্মৃতি ফিরে আসে তাঁর। নাম, ঠিকানা, একে একে সব বলতে থাকেন তিনি। ক্যালেন্ডারে চোখে পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বছর তিরিশের ওই মহিলা। সামনেই ভাইফোঁটা। তাই চার দাদার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া জন্য আকুতিমিনতি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। শেষমেশ ওই রোগীর আরজি শোনে বারাসাত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পথভোলা ওই মহিলার পরিবারের খোঁজ করে তারা। ভাইফোঁটার প্রায় সপ্তাহখানেক আগেই পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন ওই মহিলা। হাসপাতালে তরফে খবর পেয়ে শুক্রবার বারাসত হাসপাতালে আসেন প্রমীলা প্রামাণিক নামে ওই মহিলার বাড়ির লোকেরা। যে মেয়েকে কখনও ফিরে পাবেন বলে আশা করেননি, সেই মেয়েকে একেবার সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রমীলার বাবা-মা। 

[মানসিক অবসাদে গঙ্গায় ঝাঁপ, মাঝির তৎপরতায় রক্ষা পেলেন বধূ]

রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যখন ‘পেশাদারি’ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অমানবিকতা ও গাফিলতির ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠছে। সেই সময়ই বারাসত হাসপাতাল দেখাল শুধু চিকিৎসাই নয়, মানবিকতাই প্রধান। এর আগেও ভিন রাজ্যের এক মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে সুস্থ করে তার পরিবারের লোকেদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে নিজের গড়েছিল তারা। এবার প্রমীলাকে সুস্থ করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আবারও দৃষ্টান্ত তৈরি করল তারা। বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল জানান, মাস তিনেক আগে বারাসত স্টেশন থেকে উদ্ধার করে প্রমীলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে রেল পুলিশ। অসংলগ্ন কথা বলছিলেন তিনি। বাড়ির ঠিকানা, নাম কিছুই মনে করতে পারছিলেন না। তাঁকে মনরোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়। মাস তিনেক পর চিকিৎসায় সাড়া দেন তিনি। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি কুলতলি থানার মাধবপুর গ্রামে। চার বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামী প্রত্যেক রাতে মদ্যপ অবস্থায় ফিরে অত্যাচার চালাত। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে, শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন তিনি। অবসাদ থেকেই মানসিক রোগ দেখা দিয়েছিল। সুব্রতবাবুর কথায়, “স্মৃতি ফিরতেই প্রমীলা বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করতে থাকেন। বলেন, ভাইফোঁটায় দাদাদের ফোঁটা দেবেন। এরপরই হাসপাতালের তরফে কুলতলি থানায় যোগাযোগ করা হয়। থানা মারফত পরিবারের লোকেদের খবর পাঠানো হয়।”

Advertisement

[পনেরো বছর পর ধর্ষণের কলঙ্ক থেকে মুক্ত যুবক]

এদিন মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আসেন প্রমীলার বাবা-মা ও এক দাদা। এতদিন পর মেয়েকে কাছে পাওয়ার আনন্দ চোখে জলে প্রকাশ পায়। বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির ব্যবস্থাও করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসি-কান্নায় প্রমীলাকে বিদায় জানান হাসপাতালের নার্স, কর্মী থেকে আধিকারিকরা। যাওয়ার সময় সুপার সুব্রতবাবুর কাছে ছুটে আসেন ওই মহিলা। খালি হাত তাঁর কপালে ঠেকিয়ে বলেন, “আপনি আমার জন্য যা করলেন তা নিজের লোকের জন্যও কেউ করে না। আজ ভাইফোঁটা না। তবু খালিহাতে আপনাকে ফোঁটা দিয়ে দাদা বলে মানলাম।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement