Advertisement
Advertisement
Tigress Zeenat

বাগে বাঘিনি, নিশ্চিন্তে ঘুমাল বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহি

শনিবার থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন মুকুটমণিপুরের কংসাবতী জলাধার লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা।

Bankura's Gosaidihi's people feel free after Tigress Zeenat sedated
Published by: Sayani Sen
  • Posted:December 30, 2024 9:52 am
  • Updated:December 30, 2024 9:52 am  

দেবব্রত দাস, রানিবাঁধ: স্বস্তি ফিরল বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের গোঁসাইডিহি গ্রামে। শনিবার সকাল থেকে বাঘিনী জিনাতের উপস্থিতিতে আতঙ্ক গ্রাস করেছিল মুকুটমণিপুরের কংসাবতী জলাধার লাগোয়া এই গ্রামে। রবিবার বিকেলে অবশ্য সেই আতঙ্ক দূর হয়। বাঘিনী জিনাত খাঁচাবন্দি হয়েছে এটা জানার পরেই চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুলটুসি হাঁসদা, স্বপন বাস্কে, অনিশ বাস্কে-সহ এই গোঁসাইডিহি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। রবিবার রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোল গোটা গ্রাম। 

শনিবার সাতসকালেই মুকুটমণিপুরের কংসাবতী জলাধারের কোলঘেঁষা গোঁসাইডিহি, বারুনিয়া, নারকোলি, গোপালপুরে রটে যায় যে বাঘিনী জিনাত ঢুকেছে। তবে কোথায় সে আস্তানা গেড়েছে তা জানতে পারেনি সেই সময়ে। কিন্তু বনদপ্তরের একের পর এক গাড়ি গোঁসাইডিহি গ্রামে ঢুকতেই সবাই নিশ্চিত হয়ে যায় যে বাঘিনী এখানেই রয়েছে। তারপর তো একেবারে হুলস্থুল কাণ্ড। গোঁসাইডিহি গ্রামের পাশে কংসাবতী সেচ খালের একদিকে সামান্য জঙ্গল ঘেরা দেড় হেক্টর জমিতে বাঘিনীর উপস্থিতি জানতে পেরে গোটা এলাকা নেট দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। গ্রামে বাঘিনী থাকায় শনিবার সকাল থেকেই কার্যত গ্রামের মানুষজনকে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়েছে। ভয়ে কাঁটা ছিলেন সবাই।

Advertisement

তারপর রবিবার দুপুর পর্যন্ত একই পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু বিকেলে বাঘিনী ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয়েছে এই খবর রাষ্ট্র হতেই গ্রামের মানুষ উল্লসিত হয়ে নেট ফেনসিং-এর কাছাকাছি চলে আসেন। খাঁচাবন্দি বাঘিনীকে দেখার জন্য একেবারে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই বাঘিনীকে নিয়ে বনদপ্তরের গাড়ি চলে যায়। স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়েন কংসাবতী জলাধার লাগোয়া এই গ্রামের মানুষ। গোঁসাইডিহি গ্রামের বাসিন্দা ফুলটুসি হাঁসদা বলেন, “শনিবার সকালে আমরা জানতে পারি একটা বাঘিনী নাকি এখানে এসেছে। আর এটা শুনে আমরা আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। শনি ও রবিবার দুদিন ধরে আমরা বাড়িতে প্রায় রান্নাই
করতে পারিনি। সামান্য শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছি। শনিবার সারাদিন তো আমরা বাড়িতেই ঢুকিনি। বাঘিনীটা যাতে ধরা পড়ে তার জন্য প্রার্থনা করছিলাম। রবিবার বিকেলে বাঘিনী ধরা পড়েছে জানতে পেরে আমাদের আতঙ্ক কাটল।”

গোঁসাইডিহি গ্রামের আরেক বাসিন্দা মিনতি বাস্কের কথায়, “গ্রামে বাঘ থাকলে কি রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমনো যায়। সারারাত জেগে কাটিয়েছি। কি যে আতঙ্ক ছিল, তা কাউকে বলে বলে বোঝানো যাবে না। যাই হোক, বাঘিনী ধরা পড়েছে জেনে আমাদের ভালো লাগছে।” নারকোলি গ্রামের বিকাশ সর্দার বলেন, “ড্যামে মাছ ধরার জন্য ভোরে উঠি। কিন্তু পাশের গ্রামে বাঘিনী রয়েছে শুনে রবিবার আর ভোরে উঠে কংসাবতী জলাধারে মাছ ধরতে যাইনি। শুধু গোঁসাইডিহি নয়, জলাধারের আশপাশের সব গ্রামের মানুষই আতঙ্কের মধ্যে ছিল। বাঘিনী ধরা পড়ায় আমরা নিশ্চিন্তে এবার ভোরে উঠে জলাধারে যেতে পারব।” বাঘিনীর আতঙ্কে শনিবার গোপালপুর প্রাথমিক স্কুলে অঘোষিত ছুটি হয়ে গিয়েছিল। সোমবারও স্কুল খোলা থাকবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চিত ছিলেন শিক্ষকরা। তবে বাঘিনী খাঁচাবন্দি হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন স্কুলের শিক্ষকরা। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশ্বিনীকুমার মাহাতো বলেন, “বাঘিনীর আতঙ্কে শনিবার তো স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হয়েছিল। বাঘিনী ধরা না পড়লে সোমবারও স্কুল খোলা যেত না। এখন বাঘিনী ধরা পড়ায় নিশ্চিন্ত।”

বাঁকুড়ার ডিএফও (দক্ষিণ) প্রদীপ বাউরি বলেন, “গোঁসাইডিহি গ্রামটি ছোট। এই গ্রাম লাগোয়া এলাকায় বাঘিনী থাকায় গ্রামের মানুষ খুবই আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। তবে আমরা তাঁদেরকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার বন্দোবস্ত করেছিলাম।” ওড়িশার সিমলিপাল থেকে দে ছুট বাঘিনী জিনাতের দৌড় বাঁকুড়ার রানিবাঁধের গোঁসাইডিহি গ্রামে রবিবার বিকেলে থেমে গেল। দুদিন ধরে জিনাতের উপস্থিতিতে আতঙ্কের যে পরিবেশ তা এক লহমায় উধাও রবিবার সন্ধ্যায়। আতঙ্ক ভুলে নিশ্চিন্তে ঘুমাল গোঁসাইডিহি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement