টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: জল নামলেও বাড়ির আসবাবপত্র ঢেকে গিয়েছে পাঁকের আস্তরনে। পেট্রল পাম্পে দীর্ঘ লাইন। রাস্তাঘাটে দেখা মিলছে না যানবাহনের। বৃষ্টি থামার তিনদিন বাদেও বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। সূর্যাস্তের পর থেকেই অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে গোটা এলাকা। পানীয় জল পাওয়া গেলেও এখনও খাবার মিলছে না কোথাও। বৃষ্টির সময় টানা আটচল্লিশ ঘন্টা বাড়ির কার্নিশে দাড়িয়ে থেকে প্রাণে বাঁচলেও এক বুক কাদার পাহাড়ে এখন সর্বহারা এরাজ্যের তিন যুবক।
কেরলে কাজ করতে গিয়ে এখন প্রাণ হাতে ফিরে আসাই দায় বাঁকুড়ার হাটগ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত কুন্ডু, বেলেগোড়া গ্রামের বাসিন্দা সত্য বাউরি ও মহাদেব বাউরির। দৈনিক ৫০০ টাকা রোজগার, সেই লোভে কেরলে গিয়েছিলেন হাটগ্রামের প্রশান্ত। কিন্তু ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে এখন সর্বস্বান্ত এরাজ্যের শ্রমিক। প্রশান্তবাবু কেরলের ত্রিশূর জেলার কালকুড়ি গ্রামে খোলা আকাশের তলায় দিন গুজরান করছেন বলে জানিয়েছেন। তবে বন্ধুদের খোঁজ না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন তিনি।
শনিবার থেকে একের পর এক এলাকায় তিনি খোঁজ করছেন বন্ধুদের। রবিবার বিকেলের দিকে প্রশান্ত বাবু জানান, খোঁজ মিলছে না সত্য বাউরির। তবে মহাদেব বাউরির খোঁজ পেয়েছেন তিনি। মহাদেবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন ত্রিশূরেরই গুরুবাই গ্রামে কোনওরকম প্রাণে বেঁচে আছেন তিনি। কালকুড়ি গ্রাম থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দুরত্বে গুরুবাই এলাকায়। মহাদেব জানান, গত শুক্রবার সন্ধের পর আচমকাই জল হুড়মুড় করে ঢুকতে শুরু করে বাড়িতে। সেই সময় তারা সকলে একসঙ্গেই ছিলেন। রাস্তায় বেরোতেই মানুষের ঠেলা খেয়ে হাতছাড়া হয়ে যায় বন্ধুরা। প্রাণে বাঁচার তাগিদে ছোটাছুটি শুরু করে দেন তাঁরা। গুরুবাই নামের শহরটিতে একটি বাড়ির কার্ণিশে টানা দুদিন দাঁড়িয়ে থেকে প্রাণে বাঁচেন তিনি।
ভয়ঙ্কর সেই দিনগুলির কথা বলতে গিয়ে ফোনেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। তবে বন্ধু সত্যকে খুঁজে না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন তিনিও। অন্যদিকে বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশংকর এস জানিয়েছেন, কেরলে কাজ করতে গিয়ে দুর্যোগ আটকে থাকা ছাতনার তিনজন অভিজিৎ মণ্ডল, রামশংকর মণ্ডল, তাপস পাত্রর সঠিক ঠিকানা না থাকায় উদ্ধার করা যায়নি। তবে তিনি জানিয়েছেন, কেরল সরকার দুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থে ০৪৭১২৩৩০৮৩৩ এই টোল ফ্রি নম্বর চালু করেছে। উদ্বিগ্ন পরিবারগুলিকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন কোন সমস্যা হবে না। জলবন্দি এলাকাগুলি থেকে জল নামতে শুরু করেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.