অভিরূপ দাস: প্রচণ্ড যানজট, গাড়ির ধোঁয়া, বৃষ্টির অভাব। এতসব প্রতিকূলতার কারণে মহানগর কলকাতা (Kolkata) দূষণের নিরিখে প্রথম স্থানে থাকবে, এই শঙ্কা ছিলই। তবে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলির মধ্যে সার্বিক দূষণের মাপকাঠিতে শীর্ষে রয়েছে বাঁকুড়া, কলকাতা নয়। বাঁকুড়ার পরেই স্থান বর্ধমান, হুগলি, মালদহের। রাজ্যের দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম দশেও কলকাতা নেই। যদিও এই সংবাদে খুশি হওয়ার কিছু দেখছেন না পরিবেশবিদ এবং চিকিৎসকরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বাতাসে বিপজ্জনক দূষণ কণা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা বেশি তিলোত্তমাতেও। যেখানে কলকাতার বাতাসে প্রতি কিউবিক মিটারে ৫.২ পার্টিকুলেট ম্যাটার থাকার কথা। সেখানে তা রয়েছে ৫৮.২। কোন শহর কত বেশি দূষিত? তা বোঝার জন্য মাপতে হয় বাতাসে বিপজ্জনক দূষণ কণা। বাতাসে ভাসমান নানা ধরনের নানা আকারের দূষণ কণা থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর যাদের ব্যাস আড়াই মাইক্রন বা তারও কম। এদের বলা হয় ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ (বা, পিএম২.৫)’। এক মাইক্রন বলতে বোঝায় এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগের এক ভাগ। মানবরক্তের লোহিত কণিকার ব্যাস পাঁচ মাইক্রন। আর মাথার চুলের ব্যাস গড়ে ৫০ থেকে ১০০ মাইক্রন। আড়াই মাইক্রন এতটাই ক্ষুদ্র তা খালি চোখে দেখা যায় না।
এসএসকেএম হাসপাতালের রেডিয়েশন অঙ্কোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সৈরিন্ধ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিশ্বাসের মাধ্যমে এই পিএম ২.৫ সোজা চলে যায় ফুসফুসের ভিতরে। কেন দূষিত বাঁকুড়া বর্ধমান? ডা. সৈরিন্ধ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় কথায়, জরিপ করলে দেখা যাবে, কলকাতার তুলনায় দূষিত জেলাগুলোয় গ্যাসের ব্যবহার অনেক কম। এখনও কাঠ, পাতা পুড়িয়ে কিংবা উনুনে রান্না করেন অনেকে। তার থেকেই বাড়ছে দূষণ। এছাড়াও ডিজেল গাড়িও তিলোত্তমার তুলনায় অধিক চলে এই সমস্ত জেলায়।
বাতাসে আড়াই মাইক্রন ব্যাসের দূষণ কণা ছাড়াও থাকে ১০ মাইক্রন ব্যাসের দূষণ কণাও। তাদের বলা হয় ‘পিএম ১০’। তবে আকারে অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয় বলেই পিএম ২.৫ দূষণ কণা সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। তারা প্রতি মুহূর্তেই প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের ফুসফুসে ঢোকে। ফুসফুসের ক্যানসার তো বটেই, স্ট্রোক, সিওপিডি, অ্যালার্জি ছাড়াও একাধিক অসুখের কারণ এরা। নয়া সমীক্ষা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড মানলে ঠেকানো যাবে অসুখ। বাড়বে আয়ু। কতটা? কলকাতা যদি বাতাসে পিএম২.৫ কমিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনতে পারে। তাহলে প্রতিটি মানুষের গড় আয়ু পাঁচ বছর পর্যন্ত বেড়ে যাবে।
আর জি কর হাসপাতালের ফুসফুস রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সুস্মিতা কুণ্ডু জানিয়েছেন, গাছ লাগাতে হবে, একই সঙ্গে যানবাহন জনিত দূষণ কমাতে হবে। শহরাঞ্চলে রাস্তার উপরে যাঁদের বাড়ি তাঁদের প্রতি চিকিৎসকের পরামর্শ, দিনের ব্যস্ততম সময়ে জানালা বন্ধ রাখুন। তবেই বাঁচা যাবে ফুসফুসের অসুখ থেকে। নতুন সমীক্ষা প্রকাশ পেল মঙ্গলবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে। এদিন ‘বায়ুদূষণ কি আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে’ শীর্ষক আলোচনায় হাজির ছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সন্দীপ ঘোষ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডা. আশীর্বাদ রাহা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.