মন্দিরে পূজিত শিব-দুর্গা, ছবি : পরেশ মাইতি
দেবব্রত দাস, পাত্রসায়র: এ যেন ফের অকালবোধন। বিজয়া দশমী শেষ। চারদিনের সফর শেষে মা দুর্গা পাড়ি দিয়েছেন কৈলাসে। কিন্তু পাত্রসায়র আরও এক অকালবোধনের সূচনা হল একাদশীর সকালে। তাই উমার বিদায়ে দুঃখের সাগরে ভাসার আগেই পাত্রসায়রের মানুষ নতুন উদযাপনে মেতে উঠেছেন। শুরু হয়েছে শিবদুর্গার আরাধনা, যা এলাকায় কুলঠাকুরের পুজো নামেই বিখ্যাত। চিরাচরিত রীতি ও প্রথা মেনেই শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজো হয়ে আসছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র দক্ষিণপাড়ার কুল পুজোতলায়।
শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজো করেন এলাকার তন্তুবায় সম্প্রদায়ের মানুষজন। এই পুজো কে, কবে, কেন শুরু করেছিলেন তা জানেন না বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। তবে পুজোর উদ্যোক্তাদের দাবি, তন্তুবায় সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষরা স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন। একাদশীর পূণ্য তিথিতেই দেবী আরাধনায় মেতে ওঠেন তন্তুবায় সম্প্রদায়ের মানুষজন। অকালবোধনের এই পুজোর মেয়াদ অবশ্য চারদিন নয়। আটদিন। হরপার্বতীর পুজো হয় অকালবোধনের নির্ঘণ্ট মেনেই। তবে দেবীদুর্গার চার ছেলেমেয়ে এই পুজোতে হাজিরা দেন না। মহাদেব ছাড়া দেবীর সঙ্গে থাকেন দুই সখি জয়া ও বিজয়া এবং দুই পরি। পাত্রসায়রের দক্ষিণপাড়ার কুল পুজোতলায় তন্তুবায় সম্প্রদায়ের মন্দিরে হয় পুজো। নিজস্ব ঘরানায় কুলদেবী এখানে পূজিতা হন। পুজোর থানে কোনও বলি হয় না। অষ্টমাঙ্গলিক ক্রিয়াকর্মের পরে মন্দিরের পাশেই ভট পুকুরে দেবীর বিসর্জন হয়। তার আগে অবশ্য প্রথা মেনে দেবীকে নিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে গ্রাম পরিক্রমা করা হয়।
কীভাবে এই পুজোর প্রচলন হয়েছিল তা নিয়ে অবশ্য নানা মত রয়েছে। তবে প্রচলিত মত হল, তন্তুবায় সম্প্রদায়ের কোনও এক আদিপুরুষ চরকা কাটতে কাটতে দেবীর দর্শন পেয়েছিলেন। রাতে ফের হর-পার্বতীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে একাদশীর দিনই পুজো শুরু করেছিলেন। এলাকার প্রবীন বাসিন্দা পাঁচুগোপাল পাল বলেন, “১৩১৬ বঙ্গাব্দের ১৬ আশ্বিন মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। পুজো তার আগে থেকেই হয়ে আসছে। তবে কে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন তা সঠিকভাবে জানা নেই।”আটদিনের এই পুজো এলাকার মানুষের কাছে কুলঠাকুরের পুজো নামেই পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ দত্ত বলেন, “তাঁতশিল্প তো ধুঁকছে। তবে আমাদের এই পুজোয় কোনও খামতি নেই। সকলেই চাঁদা দিয়ে সাড়ম্বরে পুজো করছি। বিসর্জনের দিন একসঙ্গে পাত পেড়ে নরনারায়ণ সেবাও করানো হয়। পুজোর জৌলুস আজও অটুট রয়েছে।”
তাঁতশিল্প ধুঁকলেও পুজোর গরিমা এখনও অমলিন। পুজো এখানে চিরায়ত রীতি ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। কুলঠাকুরের আরাধনায় পুজোর আটদিন ঝলমল করে ওঠে গোটা এলাকা। এই পুজোকে ঘিরে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন তন্তুবায় সম্প্রদায়ের মানুষজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.