টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া : স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু ঘটনার সাক্ষী এই দেবালয়। দেবীর কাছে ভক্তিভরে পুজো দিয়ে ইংরেজ হটানোর লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তেন বিপ্লবীরা। বাঁকুড়ার কালীতলার কালীপুজোর পরিচিতি এমনই। এই কালীপুজোর সঙ্গে অগ্নিযুগের সশস্ত্র বিপ্লবের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। সেই স্মৃতি আজও তরতাজা বাঁকুড়াবাসীর হৃদয়ে। তবে শুধু বাঁকুড়া বললে ভুল বলা হবে, এই কালীপুজোর পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে তৎকালীন বাংলার বীর সন্তানদের নাম।
[কন্যাশ্রী মাকে চিরস্থায়ী করতে অষ্টধাতুর মূর্তি নির্মাণ]
এই বড় কালীতলা মন্দিরের সামনেই রয়েছে এক ঐতিহাসিক বাড়ি। বাঁকুড়া তথা বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে এই ঐতিহাসিক বাড়ি। যার সঙ্গে জড়িয়ে ‘অনুশীলন সমিতি’, ‘যুগান্তর দল’-এর এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। অগ্নিযুগের ইতিহাস বলছে বিশ শতকের গোড়ার দিকে স্থানীয় বাসিন্দা রামদাস চক্রবর্তীর বাড়িতে গড়ে উঠেছিল বিপ্লবীদের এই আস্তানা। সেই গোপন আস্তানায় আনাগোনা ছিল বীরেন ঘোষ, প্রফুল্ল চাকির মতো বিপ্লবীদের। আগত বিপ্লবীরা শক্তির আরাধনা করতেন এই কালীতলায়। মন্দির চত্বরে নিয়ম করে চলত বিপ্লবীদের শরীরচর্চা। এরই আড়ালে চলত বিপ্লবীদের অস্ত্রশিক্ষার প্রশিক্ষণও। কথিত আছে জনৈক রঘু ডাকাত তৎকালীন জঙ্গলে ঘেরা এলাকায় শাক্তমতে দেবীর উপাসনা শুরু করেছিল। সেই সময় ওই এলাকা ছিল প্রায় জনশূন্য। তারপর ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ঘন জনবসতি। এই মন্দির লাগোয়া এলাকাতেই রামদাস চক্রবর্তী বাড়ি তৈরি করেন। যা বৈপ্লবিক বাড়ি নামে পরিচিত।
[সংস্কার হলেও ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে কপালকুণ্ডলা মন্দির]
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বর্ণযুগের এই ইতিহাসের রক্ষণাবেক্ষণের দিকে নজর নেই কারও। দিনের পর দিন এই বিপ্লবী বাড়ি চলে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে। তবে কালীপুজোর দিন ফের সেই অগ্নিযুগের স্মরণে মন্দির সংলগ্ন মাঠে ঝোলানো হয় শামিয়ানা। রাতভর ভক্তি ভরে হয় মা কালীর আরাধনা। ইতিমধ্যেই শিল্পী তৈরি করছেন দেবী মূর্তি। ইতিহাসবিদ রথীন্দ্রমোহন চৌধুরি জানান, “বিপ্লবীদের গন্ধ মিশে রয়েছে এই মা কালীর অঙ্গে। এই পুজো বাংলার বীর সন্তানদের শক্তিযজ্ঞও বটে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.