টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: এক বছরের শিশুর রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল বাঁকুড়ায়। শিলাবতী নদীতে মাছ ধরতে নেমে মৎস্যজীবীদের জালে উঠল মৃতদেহ। জালে শিশুকন্যার দেহ উঠতেই মৎস্যজীবীদের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি চাউর হয়ে যায়। উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সিমলাপাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে পরীক্ষা করার পর মৃত বলে ঘোষণা করেন। শনিবার সাত সকালে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকে। শিশুমৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় তদন্তে নেমেছে সিমলাপাল থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত শিশুটির নাম পিয়া চট্টোপাধ্যায় (১)। বাড়ি সিমলাপালের থানাগোড়া এলাকায়। একরত্তি মেয়েকে খুনের অভিযোগ এনেছেন বাবা সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। পুলিশ অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন, বছর খানেকের শিশু বাড়ি থেকে সাতসকালে কী করে নদীর পাড়ে চলে এল। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। স্থানীয়দের দাবি, দাম্পত্য কলহের জেরেও শিশুকন্যাকে খুন করে থাকতে পারেন ওই দম্পতি। তবে সে দাবি মানছেন না শিশুকন্যার বাবা-মা। কোলের সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা মা তাপসী চট্টোপাধ্যায়। তিনি প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন। কান্নার রোল পড়েছে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে দুই মেয়ে দিয়া ও পিয়াকে কাছে নিয়েই ঘুমিয়েছিলেন তাপসীদেবী। রাতে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরের দিকে যান। মেয়েরা তখনও ঘুমিয়ে। কাজ সেরে শোওয়ার ঘরে এসে দেখেন সেখানে নেই পিয়া। গোটা বাড়ি খুঁজেও মেয়ের কোনও চিহ্ন মেলেনি। প্রতিবেশীদের বাড়িতেও খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। কিন্তু কোথাও নেই পিয়া। এর কিছুক্ষণ বাদেই নদী থেকে শিশুকন্যার দেহ উদ্ধারের খবর আসে। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় চট্টোপাধ্যায় দম্পতির আদরের পিয়ার দেহ উদ্ধার হয়েছে। কান্নায় ভেঙে পড়েন তাপসীদেবী। সঞ্জীববাবু খুনের অভিযোগ তুললেও বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মেয়ের মৃত্যুতে তাঁরও হাত থাকতে পারে। তাপসীদেবীর সঙ্গে স্বামী সঞ্জীববাবুর প্রায়শই অশান্তি হত। তবে একোনও নতুন ঘটনা নয়। তাপসীদেবী সঞ্জীববাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী। কলহপ্রিয় সঞ্জীববাবুর সঙ্গে প্রথম স্ত্রীরও অশান্তি লেগে থাকত। দিনরাত অশান্তিতে বিরক্ত হয়েই সংসার ছাড়েন ওই গৃহবধূ। দ্বিতীয়বারের জন্য তাপসীদেবীকে বিয়ে করেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। অভিযোগ, সংসারে নতুন বউ এলেও অশান্তি মেটেনি। একে একে দুই মেয়ে দিয়া ও পিয়ার জন্ম হয়। তারপরেও অশান্তি। প্রতিবেশীদের দাবি, অশান্তির জেরেই মেয়েকে খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও এই দাবির বিরোধিতা করেছেন চট্টোপাধ্যায় দম্পতি। তদন্তে নেমেছে সিমলাপাল থানার পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.