টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: লিভারের নিচে কিডনির উপরে টুপির মতো লেগে থাকা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি। পেট কেটে সেখানেই জটিল অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হল টিউমার। বিরল অস্ত্রোপচারটি করলেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শল্য চিকিৎসকরা। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় এমন টিউমারকে বলা হয় অ্যাঞ্জিও মায়ো লাইপোমা। এ আবার যেমন তেমন টিউমার নয়। রীতিমতো রক্তজালিকা, পেশী আর ফ্যাটকোষ দিয়ে তৈরি হয় এই জাতীয় টিউমার। বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা ৫৮ বছরের প্রৌঢ়া সরস্বতী কৈবর্তের পেটেই ছিল জটিল টিউমারটি। বুধবার সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শল্য চিকিৎসকরা টিউমারটি কেটে বাদ দিলেন। বর্তমানে সরস্বতীদেবী সুস্থ আছেন।
এই প্রসঙ্গে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বর্তমানে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। তারপরেও নিয়মকানুন সেই মান্ধাতা আমলের। অ্যানাস্থেসিয়া যন্ত্র দিয়ে এখনও অস্ত্রোপচার হয় এখানে। যা খুবই বিপজ্জনক। আমরা স্বাস্থ্য ভবনে অত্যাধুনিক অ্যানাস্থেসিয়া ওয়াক স্টেশন দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। পরিকাঠামো না থাকায় এই ধরনের টিউমার আক্রান্ত রোগীকে কলকাতায় এতদিন পাঠানো হচ্ছিল। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচার এটিই প্রথম। সেদিক থেকে বলতে গেলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা এই অপারেশনে ১০০ শতাংশ সফল হয়েছেন।”
জেলায় যেহেতু প্রথম এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হল, তাই যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাঁচজন শল্য চিকিৎসক, তিনজন অ্যানাস্থেটিক-সহ মোট আটজন চিকিৎসক এদিন সরস্বতীদেবীর অস্ত্রোপচার করেন। নেতৃত্বে ছিলেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শল্যচিকিৎসা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উৎপল দে। এই অপারেশন প্রসঙ্গে উৎপলবাবু বলেন, “লিভারের নিচে কিডনির ওপরে এবং শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিরা (ইনফেরিয়ার ভেনাকোবা) সঙ্গে এই গ্রন্থি সরাসরি যুক্ত থাকে। এই শিরার মাধ্যমে শরীর সমস্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে পৌছায়। তাই অস্ত্রোপচারের সময় যে কোনওভাবে ওই শিরা ফুটো বা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে সেখান থেকে শরীরের সমস্ত রক্ত বেরিয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।”
উল্লেখ্য, বিষ্ণুপুর মহকুমার বাসিন্দা সরস্বতীদেবী দীর্ঘদিন ধরে পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। একাধিকবার তিনি চিকিৎসার জন্য বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে ভরতিও হয়েছিলেন। সেখান থেকেই তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এখানে তাঁর আলট্রা সোনোগ্রাফি করার সময় অ্যাঞ্জিও মায়ো লাইপোমা ধরা পড়ে। উৎপলবাবু বলেন, “স্বাভাবিক অবস্থায় ৫ থেকে ১০ গ্রামের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি এই রোগীর দেহে বেড়ে গিয়ে ১৭৫ গ্রামের হয়ে গিয়েছিল। সাত সেন্টিমিটার লম্বা টিউমার হওয়ার কারণে ওই গ্রন্থির ওজন বেড়ে যায়। মানব দেহে এই গ্রন্থির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে শরীরের সমস্ত হরমোন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।”
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “ওই রোগী বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠছেন। গত মাসের শেষে রোগীর দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। বর্তমানে অত্যাধুনিক অ্যানাস্থেসিয়া ওয়াক স্টেশন পেয়ে গেলে আরও এমন ধরনের অস্ত্রোপচার বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সহজেই করা সম্ভব হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.