সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঘড়িতে সকাল আটটা। সবে ঘরে ঘরে চা-বিস্কুটের পাট চুকেছে। গিন্নি হেঁশেলে ঢুকতে যাবেন, এমন সময় বাইরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলতেই গৃহস্থের উঠোনে প্যাকেট ভরতি সবজি নিয়ে হাজির পাড়ারই ব্যাংক কর্মী। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনা যুদ্ধে শামিল হতে এ তো সুষম খাদ্য!
পুরুলিয়ার ঝালদা পুর শহরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কার্তিক বাউরি। রবিবার সাতসকালে এভাবেই নিজের এলাকায় বাড়ি বাড়ি সবজি পৌঁছে দিয়ে নজর কাড়লেন তিনি। আসলে, এই লকডাউনে দেরিতে হলেও ঘরবন্দি ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এই পুরশহর ঝালদা। তাই গৃহবন্দি মানুষজনের বিশেষ করে রবিবার যাতে খাবারে কোনও টান না থাকে, তাই এভাবেই সবজির প্যাকেট দিয়ে সকলের মন জয় করে নেন। একেকটি প্যাকেটে রয়েছে একটি করে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, এক আঁটি শাক, টমোটো ও লেবু। অর্থাৎ, করোনার থাবায় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে সুষম খাদ্যের কথা বলেছেন চিকিৎসকরা, সেই সবজিই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে রবিবার সকলের মধ্যমণি হয়ে যান সাধারণ ওই ব্যাংক কর্মী।
তাঁর কথায়, “লকডাউনের জন্য সব বাড়িতে টাটকা সবজি নেই। তাই আমার এলাকার মানুষজনের বাড়ি গিয়ে সবজি দিলাম – এই যা। আসলে রবিবার মানেই তো বাঙালির কাছে একটা অন্যরকম দিন। কিন্তু এই অবস্থায় এখন যেন সেসব অতীত। তবুও এই দিনটিতে এলাকার মানুষজনকে সবুজ সবজির স্বাদ দিতেই এই প্রয়াস আর কী।” তবে এই দেওয়ানেওয়া হয়েছে একেবারে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই। ওই পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কল্পনা মোদক ও তৃষ্ণা বিদ বলেন, “ এই ভাবে সাতসকালে সবজি পেয়ে যে কী খুশি হয়েছি, তা বলতে পারব না। সবজি দিয়ে এই সুষম খাদ্য দুপুরে সকলে মিলে চেটেপুটেই খেলাম।” তাঁরা আরও বলছেন, কার্তিক বাউরির মতো সকলেই যদি এমন সংকটের দিনে এভাবে একে অন্যের পাশে থাকে, তাহলে হয়ত জীবনের স্বাভাবিক গতি বজায় থাকবে এই সময়েও। আর এখানেই আর পাচঁটা মানুষের থেকে আলাদা হয়ে যান ঝালদার এই সাধারণ ব্যাংক কর্মী। হয়ে ওঠেন অসাধারণ।
ছবি: অমিত সিং দেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.