সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: হঠাৎই অবাক করার মত ঘটনা। একের পর এক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে রাশি রাশি টাকা। কারও অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার তো আবার কারও ১০ হাজার। কারও বা ৩০ হাজার তো কারও ৫০ হাজার বা তারও বেশি টাকা। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে তবে কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর দেওয়া কথা রাখতেই গ্রামের মানুষদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে শুরু করেছেন? গরিব মানুষদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নাকি তিনি ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অবশেষে হয়তো তিনিই সেই টাকা পাঠাতে আরম্ভ করেছেন। রাস্তার মোড়ে, চায়ের দোকানে শুরু হয়ে যায় জল্পনা, তাহলে দেশের গরিব মানুষদের সত্যি সত্যিই ‘আচ্ছে দিন’ এসে গেল!
শুক্রবার সকাল থেকে জেলার দ্বীপাঞ্চল ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনানের দক্ষিণ পাড়া, মাইতিপাড়া, দামুপাড়া, মুসলিম পাড়া, মীরপাড়া-সহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষের ফোনে ব্যাংক থেকে ম্যাসেজ আসতে শুরু করে। এই এলাকার দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রায় ২৫০ জন গ্রাহক দেখেন যে তাঁদের অ্যাকাউন্টে হঠাৎ করে বেশ কিছু টাকা এসে গিয়েছে। ব্যাংক ধর্মঘট থাকার কারণে তাঁরা বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি। প্রথমে বিষয়টা গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও পরে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র বা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে জানা যায় যে সত্যি সত্যিই তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে। কিন্তু কোথা থেকে এত টাকা এল তা নিয়ে ধন্দে পড়েন সকলেই। ওই এলাকায় এটিএম না থাকার কারণে অনেকেই অন্যত্র গিয়ে এটিএম থেকে টাকা তুলে নিতেও শুরু করেন। অনেকে আবার গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র থেকে টাকা তোলেন।
[ গরু চুরির অভিযোগে দুষ্কৃতীদের গণপিটুনি, জনতার উপর পুলিশের লাঠিচার্জ ]
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ এনামুল জানান বাড়িতে কাজ করার সময় হঠাৎই তিনি জানতে পারেন যে, মোদি সরকার সকলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করছে। এই খবর শুনেই তিনি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে ছোটেন। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তাঁর অ্যাকাউন্টেও ৬ হাজার টাকা জমা পড়েছে। পরে তিনি শোনেন যে ওই এলাকার বহু মানুষের অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৯৬ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা হয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে এই টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে এল, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানতে পারেননি।
আবার টাকা না পাওয়া মানুষেরা ভিড় জমাতে শুরু করেন স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসে। এই বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না বলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। এই ঘটনা নিয়ে যখন সারা এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ঠিক তখনই এই টাকা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ‘বাংলা ফসল বিমা যোজনা’-র খাতে চাষীদের দেওয়া হয়েছে বলে আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল জানান, দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মোট ১ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা কৃষকদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত বেসরকারিভাবে জানা গিয়েছে। তবে সোমবার ব্যাংক খুললে পুরো ছবিটা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি বাপি মল্লিক জানান, বিষয়টি তিনি বাজারে গিয়ে লোকমুখে শুনতে পান। স্থানীয় গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে গিয়ে তিনি বিষয়টির সত্যতা জানতে পারেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, প্রায় ২৫০ জন মানুষের অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার টাকা জমা পড়েছে। যদিও তিনি এ বিষয়ে ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ম্যানেজার জানান এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। ঘটনাটি সম্পর্কে স্থানীয় ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় জানানো হয়।
[ শরীরে দুটি জরায়ু, অন্তঃসত্ত্বার প্রাণ বাঁচাল বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল ]
বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর অ্যাকাউন্টে এই টাকা আশায় জটিলতা আরও বাড়তে থাকে। সুকান্ত পাল বলেন অনেক চাষির নিজের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই ফসল বিমার ক্ষেত্রে তাঁদের ছেলে বা মেয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া থাকে। সেই ক্ষেত্রে এরকমটা হওয়া সম্ভব। তবে পুরো বিষয়টি জেলা প্রশাসন খতিয়ে দেখছে বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.