সম্যক খান, মেদিনীপুর: মেদিনীপুর শহরের মাটিতে মেলবন্ধন ঘটল দুই বাংলার। জোড়া মসজিদে উরশকে কেন্দ্র করে ঘটল ওই মেলবন্ধন। অবশ্য বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে এসেছিলেন পুণ্যার্থীরা। সোমবার সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে এক বিশেষ ট্রেনে চেপে দুই সহস্রাধিক পুণ্যার্থী হাজির হন শহরে। এদিন সকালেই মেদিনীপুর স্টেশনে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি হাজির ছিলেন মেদিনীপুর পুরসভার প্রশাসক তথা সদর মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশ চন্দ্র বেরা, জেলা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র প্রমুখ। তবে উরশ স্পেশ্যাল ট্রেনে আসা পুণ্যার্থীদের স্টেশনে নামার পর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ টিম। তদারকি করতে খোদ হাজির ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশ চন্দ্র বেরা, সদর মহকুমা শাসক দীননারায়ণ ঘোষ নিজেও।
প্রতিবছরই ৪ ফাল্গুন মেদিনীপুরের জোড়া মসজিদের উরশে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার মানুষ আসেন। আকাশপথে ও সড়কপথের পাশাপাশি প্রতিবছরই ঊরশ স্পেশাল একটি বিশেষ ট্রেন আসে বাংলাদেশ থেকে। অন্যবারের তুলনায় এবার অতিরিক্ত সতর্ক ছিল জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর। করোনা ভাইরাস আতঙ্কের জেরে এদিন সকাল থেকেই প্রায় দশজন স্বাস্থ্যকর্মীর টিম নিয়ে হাজির ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশবাবু। মেদিনীপুর স্টেশনে নামা তীর্থযাত্রীদের অনেকেরই স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার পাশাপাশি তাদের মধ্যে জ্বরের কোনও লক্ষণ আছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। কপালে মেশিন ঠেকিয়ে তাদের স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটিও দেখা হয়। কোনওরকম জরের লক্ষণ দেখা দিলে তারা যেন সঙ্গে মেডিক্যাল ক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এদিন প্রায় দুই সহস্রাধিক পুণ্যার্থী বাংলাদেশ থেকে ওই বিশেষ ট্রেনে মেদিনীপুর এসেছেন।
স্টেশন চত্বরেই এদিন প্রায় এক হাজার জনের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। গিরিশবাবু বলেছেন, পুণ্যার্থীদের উরশস্থলে যাওয়ার তাড়া থাকায় সকলের স্বাস্থ্যপরীক্ষা সম্ভব হয়নি। যাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়েছে তাদের অবশ্য কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে উরশ স্থলে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা আছে। বারবার পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে কারও মধ্যে জ্বর সর্দি কাশির কোনও লক্ষণ দেখা দিলে তারা যেন তৎক্ষনাৎ মেডিক্যাল ক্যাম্পে যোগাযোগ করেন। প্রশাসনিক স্তরে এদিন স্টেশনে হাজির ছিলেন সদর মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষও। তিনিও বলেছেন, বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ শহরে আসছেন। সকলেরই সতর্ক থাকা উচিত। মাইকে বারেবারে সেটাই ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিন ভাবগম্ভীর ও ধর্মীয় পরিবেশে মেদিনীপুর শহরের জোড়া মসজিদে সৈয়দ শাহ মুর্শেদ আলী আলকাদেরী আলবাগদাদী তথা মওলাপাকের ১১৯ তম উরশ ঊৎসব পালিত হয়। সুফি সাধনার আদিগুরু হজরত বড়পীর গাওসুল আজম আলা জাদ্দেহির বংশধর এই মহান সুফি সাধক। সুফি সাধনার প্রসারে এই মহান সাধকের প্রপিতামহ আজ থেকে তিন হাজার বছর আগে ১৭৬৮ খ্রীষ্টাব্দে সুদূর বাগদাদ থেকে ওড়িশার চাঁদবালি বন্দর হয়ে এদেশে আসেন। দীর্ঘ কৃচ্ছ্বসাধনার পর তার পূর্বসূরীদের ন্যায় তিনিও জনসেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেন। আধ্যাত্মিক জগতের অসীম ক্ষমতার অধিকারী এই মওলাপাকেরই বার্ষিক উরশ তত্বাবধান করেন তারই প্রপৌত্র সৈয়দ শাহ রশিদ আলি আলকাদেরী আলবাগদাদী। যিনি বিশ্বনবী হজরত মহম্মদের ৩৬তম বংশধর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.