ছবি: প্রতীকী
ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে একে ৪৭-র মতো আগ্নেয়াস্ত্র এনে বোমা-গুলি নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা করছে বিরোধীরা। সীমান্তে বিএসএফ ওই সমস্ত পাচারকারীকে মদত দিচ্ছে। আমডাঙায় সিপিএমের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের হামলায় দুই দলীয় কর্মী নিহত হওয়ার পর বুধবার এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
মন্ত্রীর অভিযোগের পরই এদিন এলাকায় বিশাল বাহিনী নিয়ে গিয়ে গ্রামজুড়ে তল্লাশি চালান আইজি দক্ষিণবঙ্গ নীরজকুমার সিং। দুপুর পর্যন্ত এলাকা থেকে ২০০-র বেশি বোমা উদ্ধার হয়েছে বলে আইজি দক্ষিণবঙ্গ দাবি করেছেন। ঘটনার জেরে আমডাঙার ওসি মানস দাসকে সরিয়ে তুষার বিশ্বাসকে দায়িত্বে এনেছেন জেলা পুলিশ। দুই তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য-সহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাম শিবিরের দাবি, সংঘর্ষে সিপিএমেরও এক কর্মী নিহত হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে থমথমে আমডাঙার তাড়াবেড়িয়া গ্রাম। গোটা গ্রামজুড়ে আতঙ্ক। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বোমার অংশ বিশেষ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে আঁতকে উঠছেন গ্রামবাসীরা। যে সমস্ত জায়গায় বোমাগুলি পড়েছিল, তা এদিন সকাল থেকে উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ। আইজি দক্ষিণবঙ্গ নীরজকুমার সিং জানিয়েছেন, “দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২০০ বোমা, তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে চলছে জোর তল্লাশি।” তারাবেড়িয়া, মরিচগাছা ও বোদাই গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়াকে স্থগিত রেখেছে প্রশাসন। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। গ্রামের মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট।
স্থানীয় মানুষরা জানিয়েছেন, তাড়াবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৯টি আসন। যার মধ্যে ৯টি আসন রয়েছে তৃণমূলের দখলে। ৭টি আসন সিপিএমের এবং একটি করে আসন কংগ্রেস ও নির্দলের দখলে। মঙ্গলবার নির্দল পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। এর ফলে তাড়াবেড়িয়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বোর্ড গঠন করা ছিল সময়ের অপেক্ষা। হার নিশ্চিত জেনে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে আমডাঙার বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি বাধানোর অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে।
[টানা ৪০ বছর পর বামেদের হাতছাড়া মাটিগাড়ার আঠারোখাই পঞ্চায়েত]
তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অভিযোগ করেছেন, “বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে সিপিএম। একে ৪৭, রাইফেল দিয়ে হামলা চলেছে। পুলিশকে বলেছি, সব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি এক হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে। আমাদের লড়াই হবে রাজনৈতিকভাবে।” পালটা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, “বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে আছে আমডাঙা। বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র তৃণমূলই মজুত করেছে। নিজেদের গোষ্ঠীকোন্দল ঢাকতে এখন সিপিএমের উপর দোষ চাপাচ্ছে।”
মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন নাসির হালদার ও কুদ্দুস গানি নামে দুই তৃণমূল কর্মী। মৃত্যু হয় মুজাফ্ফর আহমেদ নামে এক সিপিএম কর্মীরও। বুধবার আমডাঙায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা আগেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। রীতিমত সংঘর্ষের চেহারা নেয়। লাগাতার বোমা পড়তে থাকে। চলে গুলিও। তৃণমূলের অভিযোগ, তাঁদের কর্মীদের উপর হামলা চালায় সিপিএম কর্মীরা। সিপিএমের ছোড়া বোমাতেই তৃণমূলের কর্মীরা মারা গিয়েছেন। সিপিএম অবশ্য তৃণমূলের তোলা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, হামলা চালাতে গিয়ে সেই বোমা ফেটে নিহত ও আহত হয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। তবে রাজনৈতিক সংঘর্ষে আমডাঙায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা রাজ্যজুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। এদিকে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকে বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় বুধবার জেলা নেতৃত্ব ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছিল। কিন্তু, এদিন সকালেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সেই বন্ধ প্রত্যাহার করে নেয় জেলা নেতৃত্ব। বুধবার সকালে অবশ্য গোটা চোপড়াই থমথমে ছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.