নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: পুত্র সন্তান চাই৷ কিন্তু হল কন্যা৷ তাই এ পৃথিবীর আলো বেশিদিন দেখার সুযোগ হল না তার৷ সদ্যোজাতকে খুনের অভিযোগ উঠল তারই বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে।
বাবা-মা, যে দুজনের কাছে সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ, তাদের বিরুদ্ধে কন্যা সন্তানকে খুনের অভিযোগ উঠল। প্রতিবেশিদের দাবি, ১৩ দিন আগে এলাকার দম্পতি মণি কুমার বিশ্বাস ও রানি বিশ্বাসের কন্যা সন্তান হয়। পুত্র সন্তানের স্বপ্নই দেখেছিল তারা। কিন্তু স্বপ্নপূরণ হয়নি। পরপর কন্যা সন্তান হওয়াতেই তাকে খুন করে দম্পতি বলে অভিযোগ। পুলিশ অভিযুক্ত মা-বাবাকে আটক করে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে৷ মঙ্গলবার সকালে বাগদা থানার সিন্দ্রানী এলাকার ঘটনায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য৷ বছর চারেকের মধ্যে পরপর তিন কন্যা সন্তানকে একইভাবে খুন করার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ জানায় প্রতিবেশিরা৷ ছেলে-মেয়ের সমান অধিকারের দাবিতে প্রচার আন্দোলন চললেও প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে তাতে যে কোনও লাভ হয়নি, বাগদার ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল৷
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে বিয়ে হয় এই বিশ্বাস দম্পতির। তারপর থেকে তাদের চারটি কন্যা সন্তান হয়৷ আগেই দুটি কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়েছে৷ ফের মঙ্গলবার ১৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। প্রতিবেশিদের বক্তব্য, বিনা চিকিৎসায় ও খেতে না দেওয়ার কারণেই সদ্যোজাতর মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দুই কন্যা সন্তানকে একইভাবে হত্যা করে ওই দম্পতি। স্থানীয় গীতা বিশ্বাস বলেন, “মেজো মেয়েকে এক প্রতিবেশি নিয়ে গিয়ে মানুষ করছে বলে সে বেঁচে আছে, নয়তো চার বছরের ওই শিশুরও প্রাণ যেত।” স্থানীয়দের অভিযোগ, এই কন্যা সন্তান হওয়ার পর থেকেই তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল দম্পতি। স্থানীয় আশা ও আইসিডিএস কর্মীদের তৎপরতায় তা করতে পারছিলেন না তারা। এলাকার লোকেরা শিশুটিকে দেখতে গেলে তাদের দেখতে দিত না দম্পতি। উপদেশ দিলে তাদের তাড়িয়ে দিত৷ আশাকর্মী সাগরিকা অধিকারি বলেন, “আগেরবার ২৩ দিনের সুস্থ বাচ্চাকে দেখে গিয়েছিলাম। তার মৃত্যুর পর খবর দেয়। এবারও ওরা পুত্র সন্তান চেয়েছিল৷ তাই শিশু কন্যাটিকে খুন করেছে বলে আমাদের অনুমান। কারণ এবারও মৃত্যুর পর খবর দেয় আমাদের।”
স্থানীয় মহিলারা আরও জানান, গর্ভবতী হওয়ার পরই ভ্রুণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল ওই দম্পতি৷ কিন্তু স্থানীয় মহিলারা বলেন, কন্যা হলে তাঁরাই মানুষ করবেন। এমন আশ্বাস পেয়ে গর্ভপাত করাননি অভিযুক্তরা৷ কিন্তু শিশু জন্মানোর পর তাকে ঠিকমতো খেতে দিত না। কেউ জিজ্ঞাসা করলে মণি বিশ্বাস বলত, “খাওয়ানোর টাকা নেই৷” মঙ্গলবার সকালে শিশুর মৃত্যুর খবর পান প্রতিবেশিরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বাগদা থানার পুলিশ। দোষীদের কড়া শাস্তির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সমাজকর্মীরা। যদিও হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত বাবা৷ অসুস্থতার কারণে কন্যার মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় সে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.