দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছিল তোড়জোড়। হুগলির বলাগড়ের নৌকাশিল্পের জিআই ট্যাগ পাওয়া নিয়ে উদ্যোগ শুরু হয় তখন থেকেই। প্রথম ধাপে গবেষক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডঃ পিনাক ঘোষ যে যে এলাকায় নৌকোশিল্প এখনও বেঁচে রয়েছে, সেগুলি পরিদর্শন করে বিভিন্ন মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এবার পরবর্তী ধাপে শেষ পর্যায়ে এই নৌকোশিল্পের ওরাল হেরিটেজ সম্পর্কিত তথ্যের সন্ধানে রবিবার থেকে কাজ শুরু করলেন গবেষকরা। আগামিদিনে বলাগড়ের নৌকাশিল্প জিআই ট্যাগ পেলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই উপকৃত হবেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত নৌ-শিল্পীরা। আর এই কাজে গবেষকদের সর্বতোভাবে গবেষণালব্ধ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বলাগড়ের এক অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
রবিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে ডঃ পিনাক ঘোষ বলাগড়ের নৌ শিল্পাঞ্চলগুলি পরিদর্শন করেন। এই নৌ-শিল্পকে কেন্দ্র করে যে কালচারাল হেরিটেজ জড়িয়ে আছে সেই সম্পর্কে তথ্য অন্বেষণ করা হয়। পিনাকবাবু বলেন, ‘‘এই নৌ-শিল্পকে কেন্দ্র করে পার্থবাবুর একটি বইতে যে প্রবাদ, ছড়া ও গানের উল্লেখ রয়েছে তা তাদের এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রভূত সাহায্য করেছে। ইতিমধ্যে বলাগড়ের নৌ শিল্পীদের নিয়ে একটি নৌ-শিল্প সমিতি গড়ে উঠেছে।’’ জিআই ট্যাগ পাওয়ার বিষয়ে গবেষকরা নিয়মিত নৌ শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাগজপত্র তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জিআই-এর হাত ধরে ফের ঘুরে দাঁড়াতে চলেছে হারিয়ে যেতে বসা বলাগড়ের ৩০০ বছরের প্রাচীন নৌকাশিল্প। শেষ পর্যায়ে এই শিল্পের ওরাল হেরিটেজ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখে গেলেন গবেষক দল। দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকতে শুরু করেছিল এই শিল্প। বহু শিল্পী অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই পেশা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। বলাগড়ের নৌকাশিল্পের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল প্রাচীন পদ্ধতি মেনে আজও এই নৌকা তৈরি হয়। বিশেষ করে এই নৌকার জোড় বাঁধার পদ্ধতি এই জিআই ট্যাগ পাওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট জোরালো দাবি রেখেছে। নৌকোর দুটি খাপ একসঙ্গে জুড়ে আগুন জ্বালিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সেই কাঠকে বাঁকানো হয়। বর্তমানে সারা বিশ্বে এইভাবে জোড় পদ্ধতিতে নৌকো বানানোর প্রচলন নেই। তাই খুব শীঘ্রই এই জিআই ট্যাগ পাওয়ার বিষয়ে রীতিমতো উৎসাহ লক্ষ করা যায় নৌকাশিল্পীদের মধ্যে।
নৌ শিল্পীরা জানান, তাঁদের তৈরি নৌকা অত্যন্ত মজবুত এবং ঝড়-ঝাপটা প্রতিরোধে রীতিমতো সক্রিয়। তা সত্ত্বেও এর গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তাঁদের রুজি-রোজগারে টান পড়েছিল। এই শিল্প জিআই ট্যাগ পেলে তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.