সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কথায় আছে, ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’। এখন সেই কথার রেশ ছুঁয়ে ভোটের বাজারে জঙ্গলমহল পুরুলিয়াতে মুখে-মুখে ফিরছে ‘যত কাণ্ড বাঘমুন্ডিতে’! এই কেন্দ্রের প্রথম সারির রাজনৈতিক দলের তিন প্রার্থীই যে বাঘমুন্ডি বিধানসভা এলাকার। ফলে বাঘমুন্ডির আবর্তেই যেন এবার এই কেন্দ্রের লোকসভা ভোট। বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর বাড়ি এই বিধানসভার ঝালদা এক নম্বর ব্লকের পুস্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাতরাডি গ্রামে। অন্যদিকে ঝালদা এক নম্বর ব্লকের ইচাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের ইচাগে থাকেন কংগ্রেস প্রার্থী তথা বিধানসভার কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার নেপাল মাহাতো। আবার বাম প্রার্থী তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন সাংসদ বীর সিং মাহাতোর বাড়িও এই বিধানসভার বাঘমুন্ডি ব্লকের সুইসা-তুনতুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সারিডি গ্রামে। ফলে ‘বাঘমুন্ডির বাঘ’ কে তা নিয়ে ভোটের ময়দানে এখন জোর লড়াই পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা বাঘমুন্ডিতে।
পুরুলিয়া লোকসভার সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে ছ’টি বিধানসভায় এই তিন প্রার্থীর কত ভোট থাকবে তা থেকে বড় মাথাব্যথা বাঘমুন্ডি বিধানসভা নিয়েই। কারণ, পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রার্থী নেপাল মাহাতো এই বাঘমুন্ডিরই বিধায়ক। আর বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় ২০১৬ সালের বিধানসভায় এই বাঘমুন্ডি থেকেই প্রার্থী হন। অন্যদিকে, এই বাঘমুন্ডিই এরাজ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি ছিল। ফলে বাঘমুন্ডি জয় করতে মরিয়া এখন তিন প্রার্থীই। তিনজনই বাঘমুন্ডি বিধানসভায় সবচেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন। তাই এই লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো ওই তিন প্রার্থীকে বিঁধে বলেছেন, “বাঘমুন্ডির বাঘ কে হবে তা নিয়ে ওনারা লড়াই করুন। আর আমি ‘পুরুলিয়ার বাঘ’ হয়ে আবার দিল্লি চলে যাব।” সবে মিলিয়ে বাঘমুন্ডির আবর্তে পুরুলিয়া লোকসভা ভোট এবার একেবারে জমজমাট।
এই জমজমাট লড়াইয়ে যে শাসকদল নেই তা কিন্তু বলা যাবে না। পুরুলিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, বাঘমুন্ডি অতীতে দীর্ঘদিন লাল দুর্গ ছিল। তারপর সেখানে থাবা বসায় কংগ্রেস। এরপরই বাঘমুন্ডি দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে শাসকদল তৃণমূল। বলা যায়, বাঘমুন্ডিকে ‘পাখির চোখ’ করে নেয় তারা। কিন্তু এরই মধ্যে বাঘমুন্ডিতে বাড়তে থাকে বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই কেন্দ্রে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি কংগ্রেস। তাই বাঘমুন্ডি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করতে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে হয় কংগ্রেসকে। আর এই বিষয়কে সামনে রেখেই এই পাহাড়–জঙ্গলে বাজিমাত করতে চাইছে তৃণমূল। এই লড়াইয়ে বাঘমুন্ডির বিধায়ক তথা পুরুলিয়া কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো বলেন, “বাঘমুন্ডি বিধানসভা কেন্দ্র হওয়ার পর আমি পরপর দু’বার বিধায়ক। আর বাকি দু’জন এখানকার ভোটার হলেও শহর পুরুলিয়ায় থাকেন। ফলে আর কি কিছু বলার আছে? এবার যা বলার ভোটের ফলাফল বলবে।”
পুরুলিয়া কেন্দ্রে এবার লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির। কিন্তু বাঘমুন্ডিতে লড়াই এই বিধানসভার তিন প্রার্থী সহ শাসক দলেরও। বাম প্রার্থী বীর সিং মাহাতো বলেন, “বাঘমুন্ডির বাঘ আমিই। নেপাল তো গত বিধানসভায় আমাদের ভোটেই বিধায়ক হন। আর আমি এখান থেকে লড়ে কোন ভোটে হারিনি। পাঁচবার সাংসদ সহ পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলাপরিষদে দাঁড়িয়ে জিতেছি।” কিন্তু সেই সব অতীতের সাফল্যকে হেলায় উড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপি। তাই দলের প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বলছেন, “পুরুলিয়ায় গেরুয়া ঝড়ের উৎস বাঘমুন্ডি থেকেই। ফলে সেই ঝড়ের দাপটে উড়ে যাবে সব।” তাই তো সেই কথাই মুখে-মুখে ফিরছে, ‘যত কাণ্ড বাঘমুন্ডিতে’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.