ছবি- প্রতীকী
রঞ্জন মহাপাত্র: ফরফরে সাদা ভাত, বেগুনভাজা, সরষে ইলিশ। হাত পেতে নিয়ে চেটেপুটে বাঙালি ভোজন। ইলিশ নিয়ে বাঙালির হেঁশেলে যেমন হরেক পদ, তেমনই কালিদাসের রচনায়ও এর স্বাদু উপস্থিতি। ইলশেগুড়ি বৃষ্টি যেমন ভিজতে ডাকে, তেমনই ইলিশের তেল আহ্বান জানায় গোগ্রাসে ভাত খাওয়ার। তবে ইলিশ খাওয়ার বিষয়টি আজ আর এত সহজ নয়। একটু আধটু এদিক ওদিক হলে জরিমানা তো বটেই, জেলও হতে পারে।
আসলে বয়স্করা তত ঝামেলা পাকাচ্ছে না। যত কারবার ওই খোকাদের নিয়ে। কারবারই বটে। বেআইনি ভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে খোকা ইলিশ ডেকে আনছে বিপদ। বিষয়টা এরকম। খোকা ইলিশ ধরা, বিক্রি ও কেনা সবেতেই এবার জরিমানা ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার বিধানসভায় বিল আনতে চলেছে। এই বিল পাশ হলেই সমুদ্র থেকে খোকা ইলিশ ধরে বাজারে এনে বিক্রি করলেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গন্য করা হবে। নিষেধাজ্ঞা থাক। তাকে থোড়াই কেয়ার সমুদ্রের মাছ ব্যবসায়ীদের। এখানে একটু কড়াকড়ি হচ্ছে দেখে ঘুরিয়ে নাক দেখানোর রাস্তায় ব্যবসায়ীরা। কেমন করে? দিঘার খোকা ইলিশ সহজে ওড়িশার বাজার ঘুরে আবার ফিরছে এ রাজ্যে, ছড়িয়ে পড়ছে ভারতবর্ষের বিভিন্ন বাজারে। দিঘা, পেটুয়াঘাট, শংকরপুর, জলধা, জুনপুট, শৌলা এলাকার মাছ অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত ধরে ঘুরপথে পাড়ি দিচ্ছে ওড়িশার তালসারি মাছের বাজারে। সেইসঙ্গে কাঁথি, রামনগর সহ জেলা ও রাজ্যের মাছের বাজারগুলিতেও খোকা ইলিশের রমরমা বিক্রি চলছে। ব্যবসায়ীদের কাছেও খবর আছে মৎস্য দপ্তর কর্মী সংকটে জেরবার। তাই নজরদারির অভাবে দেদার বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ২৩ মিলিমিটারের (৯ ইঞ্চি) ছোট ইলিশ অর্থাৎ খোকা ইলিশ।
[সংসদে মোবাইল ব্যবহার, অনুরাগকে ধমক সুমিত্রা মহাজনের]
ইলিশের জীবনসীমা ৪ বছর। পূর্নাঙ্গ ইলিশের ওজন ২.৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। মাছ যত বড় হয় স্বাদ হয় তত বেশি। অথচ ইদানীং বড় ইলিশের দেখা মেলে কই! তাই খোকা ইলিশ দিয়েই সেই স্বাদ মেটাতে চাইছেন বাঙালি। এদিকে খোকা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে সরকারিভাবে ৯০ মিলিমিটারের বড় ফাঁসের জাল ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বটে কিন্তু তার বাইরে নেই কোন কড়াকড়ি প্রশাসনিক ব্যবস্থা। ১২ নটিক্যাল মাইল অর্থাৎ রাজ্য জলসীমার মধ্যে ভুটভুটি, ছোট নৌকায় ধরা হচ্ছে ২৩ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ মাছ। ভুটভুটি কিংবা ছোট নৌকাগুলি গভীর সমুদ্র পাড়ি দিতে পারে না। ছোট নৌকাগুলি মূলত ছোট মাছ ধরার জন্যে সমুদ্র পাড়ি দেয়। ছোট মাছ ধরার জন্যে তারা ৯০ মিলিমিটারের ছোট জাল ব্যবহার করে। কারণ ৯০ মিলিমিটারের বড় জালে ছোট মাছ ধরা সম্ভব নয়। তাই তারা ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে থাকে। আর তাতেই আটকে যাচ্ছে খোকা ইলিশ। অজুহাত রেডি। মৎস্যজীবীরা বলেন, বড় ইলিশের সঙ্গে ছোট ইলিশ জালে উঠে আসছে। রাজ্যে খোকা ইলিশ বিক্রি বন্ধ থাকায় খোকা ইলিশগুলি ওড়িশা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, খোকা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি যে সমস্ত ব্যবসায়ী খোকা ইলিশ ধরছেন তাদের ট্রলার জাল ও মাছ বাজেয়াপ্ত করা প্রয়োজন। মৎস্য দপ্তর সূত্র জানা গিয়েছে, বাজেয়াপ্ত খোকা ইলিশগুলি নিলাম করার বদলে মাছ সরকারি হোম কিংবা স্কুলের মিডডে মিলে দেওয়ার কথা ভাবনায় রয়েছে রাজ্যের। সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফিসারিজ এডুকেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর যে পরিমাণ ইলিশ মাছ ধরা পড়ে তার মধ্যে ধারাবাহিকতা থাকে না। যেমন ২০১৪ সালে ধরা পড়েছিল ৫,২৪৭ টন ইলিশ মাছ। আবার ২০০১-০২ সালে রাজ্যে জালে ধরা পড়েছিল ৪৪,৮১০ টন ইলিশ। একই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল ২০১০-১১ সালেও। তবে ২০১৬ সালে যে পরিমাণ ইলিশ উঠেছিল তা এ রাজ্যে বেনজির। তখনই বোঝা যায় কেবলমাত্র কর্মীর অভাবে নজরদারি না থাকার কারণে কীভাবে বেআইনিভাবে জালে তোলা হচ্ছে খোকা ইলিশ। এবং একই কারণে বাজারে প্রকাশ্যেই তা উঠছে দাড়িপাল্লাতে। আর কম দামে জলের রুপোলি শষ্যকে ঘরে তুলতে মরিয়া সাধারণ মানুষ খোকা ইলিশেই স্বাদ মেটাচ্ছেন। কিন্তু এই ইলিশ ধরা থেকে শুরু করে, বিক্রি, কেনাকাটা পুরোটাই বেআইনি। ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় আর ক্রেতারা ইলিশের গন্ধে ভাত মাখার আশায় সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে সরিয়ে ছুটছে খোকাদের পিছনে।
[Jio-কে টেক্কা দিতে এবার Airtel কী আনছে জানেন?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.