সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জনসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করা যদি নেশা হয়, তাহলে তাঁদের পেশাও সেই জনসেবাই। একটু অন্যভাবে। একদিকে জনপ্রতিনিধি, অন্যদিকে জনতার চিকিৎসক। বলা হচ্ছে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও রাজ্যের মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের কথা।
লকডাউনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও, জনসেবা বন্ধ থাকেনি এই চিকিৎসক দম্পতির। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, নিজেদের তৈরি ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের দরজা তাঁরা একদিনও বন্ধ রাখেননি। উলটে এই দীর্ঘ বন্দিদশায় ডাক্তার কাকলি ও সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের হাত ধরে পৃথিবীর আলো দেখেছে অন্তত ৩০ জন শিশু, যারা সকলেই টেস্ট টিউব বেবি। ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) পদ্ধতিতে সন্তান উপহার দিয়ে কতশত দম্পতির মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তাঁরা।
রাজনীতিতে অনেক পরে আসা সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের। যে নারীরা স্বাভাবিকভাবে মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত, তাঁদের জন্য গোড়া থেকে লড়াই চালিয়েছেন আজ রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিধায়ক সুদর্শনবাবু। আটের দশকে এই কাজ সহজ ছিল না খুব। তাঁকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রথম তাঁর হাতে সাফল্যের সঙ্গে মায়ের কোল আলো করে আসে নলজাতক শিশু। তারপরই জবাব পেয়ে যান সমালোচকরা। কাকলিদেবীর কেরিয়ারটা অনেকটা এরকম। তবে তাঁর কাজের জায়গাটা একটু আলাদা। IVF পদ্ধতিতে নারী শরীরে ডিম্বাণু তৈরির কাজ কতটা এগোল, আলট্রাসাউন্ড দিয়ে সেই পর্যবেক্ষণের কাজে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামলান ডাক্তার কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
বেশ কয়েকজন দম্পতির IVF চিকিৎসা চলছিল কাকলি-সুদর্শনের ক্লিনিকে। মাঝে দীর্ঘ তিন মাসের লকডাউন। কার্যত বন্দি সকলে। রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাঁরা সময়মতোই ক্লিনিকে উপস্থিত হয়ে যথাযথ চিকিৎসা করিয়েছেন। এবং তাঁদেরই জন্য প্রত্যেকদিন নিয়ম করে ক্লিনিক খুলে রেখেছিলেন এই চিকিৎসক দম্পতি। বছরের বাকি দিনগুলোর মতো। আর এভাবেই তাঁদের হাত ধরে পৃথিবীতে এসেছে নতুন প্রাণ। লকডাউনের বন্দিদশায় মায়েদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে আত্মজ। গড়িয়াহাটে কাকলি-সুদর্শনের ক্লিনিকে সব কাজ হয়েছে সামাজিক দূরত্ববিধি, স্বাস্থ্যবিধি। এখানে যে এতটুকুও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটবে না, সে বিষয়ে ষোল আনা নিশ্চিত হবু মা-বাবারা। সেই ভরসাতেই এখানে আসা।
আর এই দুই জনপ্রতিনিধির কাছে ওই মা-বাবাদের ভরসা, হাসিমুখটাই পরম প্রাপ্তি। ডাক্তারি তাঁদের পেশা হলেও, দুজনেই বলছেন, টাকাপয়সার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ নবাগতকে পৃথিবীকে আলো দেখানো। এভাবেই রাজনীতির বৃত্তের বাইরে গিয়ে সাংসদ-মন্ত্রী দম্পতি লকডাউন কাটিয়েছেন। তাঁদের জীবনে কোনও লকডাউন ছিল না। কর্মচক্র এগিয়েছে চিরাচরিত গতিতেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.