গৌতম ব্রহ্ম: চরক সংহিতাকে যিনি সাধারণের বোধগম্য করার চেষ্টায় একের পর এক ভাষ্য লিখেছিলেন। আয়ুর্বেদের পরিধিকে বিস্তৃত করার চেষ্টায় জীবনপণ করেছিলেন সেই কবিরাজ গঙ্গাধর রায়ের বাড়ি অবশেষে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে এই খাতে প্রাথমিকভাবে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে।
মুর্শিদাবাদের সৈদাবাদে গঙ্গাধরের বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অমুল্য সম্পদ নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সংবাদ প্রতিদিন-এ। ওই প্রতিবেদনে কিংবদন্তি হয়ে ওঠা কবিরাজের যাবতীয় সৃষ্টি, ব্যবহৃত সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য সরকারেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেই ডাকে সাড়া দিল কেন্দ্র। খুশি রাজ্য তথা দেশের আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা। রাজস্থানের জয়পুরের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ’- এর অধ্যাপক ডা. অসিত পাঁজা দীর্ঘদিন পর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করে গঙ্গাধরকে ফের পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসেন।
কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানোর আগে মুর্শিদাবাদের সৈয়দাবাদে কবিরাজ গঙ্গাধর রায়ের বাড়ি যা এখন রাজ্য আয়ুষ সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র তা পরিদর্শন করেন রাজ্যের আয়ুর্বেদ অধিকর্তা ডা. দেবাশীষ ঘোষ। পাশাপাশি ডা. বিশ্বজিৎ ঘোষ, গবেষক ড. সুদীপ্ত মুন্সি-সহ বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি গঙ্গাধরের বাড়িতে যান। পরিদর্শনের পর ওই বাড়িতেই দেবাশীষবাবু পূর্ত দফতরের একাধিক আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, মিউজিয়ামের সঙ্গে একটি গ্রন্থাগার করা হবে। যেখানে কবিরাজ গঙ্গাধর রায়ের লেখা জল্পকল্পতরু-সহ একাধিক দুষ্প্রাপ্য বই থাকবে।
বিষয়টি চলতি বছরের ৮ এপ্রিল সামনে আনে সংবাদ প্রতিদিন। কেন্দ্রকে মিউজিয়াম করার প্রস্তাব পাঠায় নবান্ন। বিষয়টি নিয়ে দিল্লির আয়ুশ মন্ত্রকের সদর চরক ভবনে আলোচনা হয়। অতঃপর মিউজিয়াম তৈরির জন্য রাজ্যকে অর্থ বরাদ্দ করে দিল্লি। অসিতবাবু জানিয়েছেন, ‘‘খুব আনন্দের খবর। ২০১৮ সাল থেকে কবিরাজ গঙ্গাধরকে নিয়ে কাজ করছি। ২০২৩ সাল থেকে তাতে যোগ দেয় ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়। ভাল লাগছে আয়ুর্বেদের উন্নতিকল্পে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি আমরা। মিউজিয়ামটি যাতে বিশ্বমানের হয়, সেটা নিশ্চিত হলে একটা মাইলস্টোন হবে।’’
খুশি ডা. বিশ্বজিৎ ঘোষ। সরকারি এই চিকিৎসক জানালেন, ‘‘এমন অনেক মণিমুক্তো বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। বঙ্গ আয়ুর্বেদের পুরনো গরিমা ফেরাতে হবে।’’ উল্লেখ্য, কবিরাজ গঙ্গাধর রায় নাড়ি টিপে নিজের মৃত্যুর দিনক্ষণ বলে দিয়েছিলেন। স্বল্প ওষুধে সারিয়ে তুলেছিলেন অগণিত রোগীকে। মুর্শিদাবাদের নবাব, রানিমাও রোগীদের তালিকায় ছিলেন। লিখেছিলেন পাঁচ হাজার পাতার চরক টিকা জল্পকল্পতরু-সহ শতাধিক বই। কিন্তু নিজেই চলে গিয়েছিলেন বিস্মৃতির অতলে। অবশেষে আবার সামনে এল বঙ্গ আয়ুর্বেদের দ্যুতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.